Translate

সবার ভিতর থেকেও একা

Friday, April 29, 2016

0 মন্তব্য(গুলি)

কিছু মানুষ থাকে,
একা।
সবার ভিতর থেকেও একা
সবার সাথে হাসে, সবার সাথেই কাঁদে,
কিন্তু কেউ
তার সাথে কাঁদেনা।
একাকীত্ব তার অস্তিত্বে
মিশে যায়।
তখন সে ধরে নেয় একা থাকাই তার
প্রাপ্য।
.
.
.!
!!

তোমার চির-চেনা পথের ঐ

0 মন্তব্য(গুলি)

তোমার চির-চেনা পথের ঐ সীমা ছাড়িয়ে,
এই প্রেম বুকে ধরে,
আমি হয়তো  হারিয়ে যাবো,
কোন এক শিশির ভেজা সকালে।
চোখের গভীরে তবু মিছে ইচ্ছে জড়িয়ে;
একবার,
শুধ একটি বার হাতটা দাও বাড়িয়ে।।
আসবেনা ফিরে তুমি জানি কোনদিন, তবু প্রার্থনা তোমার জন্য;
হবে না মলিন।
হবেনা মলিন??

কেন মিথ্যে বলছো

0 মন্তব্য(গুলি)

কেন মিথ্যে বলছো, কেন একাই কাঁদছো..!
করে একাকি আমায়, তুমি ভাল কি আছো...
অশান্ত এই হৃদয় পেরিয়ে শত নষ্ট সময়..
খুঁজে পাই ফিরে ফিরে আমাতে শেষ আশ্রয়.?.,,?

জীবনটা কতো বৈচিত্রময়

0 মন্তব্য(গুলি)

জীবনটা কতো বৈচিত্রময়॥
মুহুর্তে মুহুর্তে
পরিবর্তন হয়।
স্বপ্ন ভাঙ্গে স্বপ্ন গড়ে॥
কখনো দুঃখ কখনো কষ্ট।ক্লান্তি,হতাশা
আর পাওয়া না পাওয়ার খেলা॥
তারপরে ও
কোনো কিছু থেমে নেই। কারো জন্য থেমে
নেই॥ এভাবেই চলবে জীবন....

স্বপ্ন দেখার আশা

0 মন্তব্য(গুলি)

রাত মানে গভীর নেশা, স্বপ্ন দেখার আশা
রাত মানে লুকিয়ে থাকা উষ্ণ ভালবাসা।
রাত মানে চোখটি বুজে স্রিতির মোড়ক খোলা।
রাত মানে.....

মানুষ মনের অজান্তেই

0 মন্তব্য(গুলি)

কিছু কিছু মানুষ মনের অজান্তেই খুব কাছে আসে।
আবার অনেক দূরে চলে যায়,
সে বুজতে পারে না তার চলে যাওয়াটা কারো কাছে কথোটা কষ্টের।
যে অপেক্ষা করে সেই বুজতে পারে কষ্ট কি!!!!!!!
,
,

এই অভিমান এই ব্যথা

0 মন্তব্য(গুলি)

এই অভিমান এই ব্যথা মোর
জানি না হে মন চোর
তবুও
কেন এমন কঠোর বুঝতে
আমি পারি না যে
......
..
...
...
..
.

আন্ধকার আমার কেন

0 মন্তব্য(গুলি)

জানিনা আন্ধকার আমার কেন ভাল লাগে  ?
মনে চায় দিনের আলো থেকে লুকিয়ে আন্ধকার এর মধ্যে চুপটি করে বসে থাকি।
যাতে করে কেউ বা কোন কিছু আমাকে না
দেখে ।
,
,
,
,

চেচনিয়ায় মুসলিম গণহত্যা ও নির্যাতনের নির্মম ইতিহাস

0 মন্তব্য(গুলি)

চেচনিয়া পরিচিতি
চেচনিয়া রুশ ফেডারেশনের অন্তর্গত একটি মুসলিম স্বায়ত্বশাসিত অঞ্চল। চেচনিয়া রাশিয়ার উত্তর ককেসাস অঞ্চলে অবস্থিত। চেচনিয়ার আয়তন ১ লাখ ৩০ হাজার বর্গকিলোমিটার এবং লোকসংখ্যা ১৪ লাখ। চেচনিয়ার অধিকাংশ জনগণ মুসলিম। চেচনিয়া বহু বছর ধরে স্বাধীনতা আন্দোলন চালিয়ে আসছেন এবং তাদের বিরুদ্ধে রুশ আগ্রাসনের ইতিহাস প্রায় চারশ' বছরের। পিটার দি গ্রেট থেকে শুরু করে বর্তমান মেদভেদেভ পর্যন্ত সব শাসকই চেচনিয়ার স্বাধীনতার দাবিকে অগ্রাহ্য করে এসেছে।

চেচনিয়া বিদ্রোহের অতীত ইতিহাসঃ
রাশিয়া ও চেচনিয়ার ক্ষুদ্র কোকেসিয়ান প্রজাতন্ত্রের দ্বন্দ্ব ৩ শতাব্দী পূর্বে প্রায় ঈসায়ী ১৭০০ সাল থেকেই চলে আসছে, যখন সার পিটার দি গ্রেট তার অভিযানের জন্য এই পাহাড়ী অঞ্চল ব্যবহার করত যা কিনা এশিয়া ও ইউরোপকে পৃথক করে রেখেছে।
রাশিয়ানদের প্রসারণনীতি এবং কোসাকবাসীদের আগমণকে কেন্দ্র করে কোকেসাসের অধিকাংশ মুসলিম জনগণ মনসুর উসুরমা এর নেতৃত্বে ঈসায়ী ১৭৮৫ থেকে ১৭৯১ সালে বিদ্রোহী হয়ে ওঠে।
১৯শ শতাব্দীর প্রথমার্ধ্বে চেচনিয়া ছিল কোকেসাসের স্বাধীনতার জন্য ইসলামিক বিপ্লবের কেন্দ্রবিন্দু। মুসলমানেরা এ সময় ১৮৩৪ থেকে ১৮৫৯ সাল পর্যন্ত ইমাম শামাইল এর নেতৃত্বে বিদ্রোহ করেন। পরবর্তীতে ১৮৭৭ থেকে ১৮৭৮ সাল পর্যন্ত আবারও বিপ্লব সংঘটিত হয়েছিল।

১ম বিশ্ব-যুদ্ধের পরঃ
ঈসায়ী ১৯১৭ থেকে ১৯২৪ সালের মধ্যে সোভিয়েত ইউনিয়ন গঠনের পূর্বে চেচেনরা যুদ্ধের মাধ্যমে রাশিয়ান বলশেভিক ও শ্বেত রাশিয়ানদেরকে হটানোর জন্য অন্য অঞ্চলের অধিবাসীদের সাথে যোগ দেয়। এ সময় দাজেস্তানের নকশবন্দী মুসলমানেরা শেখ ও নাজমুদ্দীনের নেতৃত্বে সংঘবদ্ধ হয় এবং ১৯১৭ সালে উত্তর কোকেসাসে ইসলামী রাষ্ট্রের ঘোষণা দেয়। সোভিয়েত শাসনের সময় চেচেন ও ইংগুস্তিয়ানকে স্বায়ত্ত্বশাসিত অঞ্চলে রূপান্তরিত করা হয় ও পরে ১৯৩৪ সালে তারা একত্রিতভাবে একটিমাত্র অঞ্চলে পরিণত হয়। এটি ১৯৩৬ সালে প্রজাতন্ত্রে রূপ নেয়।

২য় বিশ্বযুদ্ধের সময়ঃ
১৯৪০ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে হাসান ইসরাইলভ ও হুসাইন তারা দক্ষিণ-পূর্ব চেচনিয়ার পাহাড়গুলোতে গেরিলা বাহিনী গঠন করে যারা সোভিয়েতের বিরুদ্ধে সামরিক আন্দোলনের জন্য গেরিলাদের সংগঠিত করছিল। ১৯৪০ সালে ইসরাইলভের বিদ্রোহী বাহিনীর পরিধি দক্ষিন ও কেন্দ্রীয় চেচেন-ইঙ্গুস্তিয়ানে বিস্তার লাভ করল। ১৯৪১ সালে জার্মান আক্রমণের সময় আন্দোলনে বহু সমর্থক যোগাতে সক্ষম হয়েছিলেন। অনেক অঞ্চলে প্রায় ৮০% মানুষ সেই আন্দোলনে যোগ দেন। কিন্তু সোভিয়েত বিদ্রোহীদের দমনের জন্য বোমা নিক্ষেপণের পদক্ষেপ নিয়েছিল। বহু বেসামরিক মানুষ এতে ক্ষতিগ্রস্থ হয়।
১৯৪২ সালে মাইরবেক শেরিপভ নামক ব্যক্তি শাতই, খিমখক ও ইতুম-কেল অঞ্চলে বিদ্রোহ বিস্তার করেছিলেন এবং ইসরাইলভদের সাথে ঐক্যবদ্ধ হয়েছিলেন। তারা একত্রে পশ্চিম দাজেস্তান নিয়ন্ত্রণ শুরু করেছিলেন। জার্মানি এ সময় ইসরাইলভের সাথে হাত মিলাতে চেয়েছিল, কিন্তু ইসরাইলভ তা প্রত্যাখ্যান করে দেন। জার্মান নাজি বাহিনী ও চেচেন বাহিনীর মধ্যে চিন্তা ধারায় ব্যাপক পার্থক্য ছিল। এছাড়া হাসান ইসরাইলভ তিনি হিটলারকে অপছন্দ করতেন।

মুসলিম গণহত্যার ষড়যন্ত্র:
২য় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে সোভিয়েত কর্তৃপক্ষ মানুষদেরকে সেনাবাহিনীতে জোরপূর্বক অন্তর্ভুক্ত করছিল। কিন্তু চেচেন-ইঙ্গুশরা এটার ব্যাপকভাবে বিরোধিতা করেছিল। ১৯৪২ সালে শীতকালে যখন কর্তৃপক্ষ জোরপূর্বক সেনাবাহিনীতে ঢুকাচ্ছিল, তখন পুলিশ রিপোর্ট অনুযায়ী সেনাবাহিনীতে সক্ষম ১৪০০০ চেচেনদের মধ্যে মাত্র ৪৩৯৫ জনকে লিস্ট করা সম্ভব হয়েছিল, আর ২৩৬৫ জন পালিয়ে গিয়েছিল। সোভিয়েত সরকার এ সময় অনেক চেষ্টা করে ১৭৫০০ জন চেচেনকে অন্তর্ভুক্ত করতে পেরেছিল, যার অনেকে পালিয়ে গিয়েছিল। ১৯৪১ থেকে ১৯৪৪ সালের মধ্যে রেড আর্মি থেকে পালিয়ে যাওয়া চেচেন ও ইঙ্গুশদের সংখ্যা ৫০০০০ এ পৌঁছেছিল এবং ১৪০০০ জন পাহাড়ে পলায়নরত ছিলেন।
এরপরও ২য় বিশ্বযুদ্ধের সময় ৪০,০০০ চেচেন ও ইঙ্গুশ মানুষেরা সোভিয়েতের রেড আর্মির পক্ষে যুদ্ধ করেছিলেন, তন্মধ্যে ৫০ জনকে ‘হিরো অব সোভিয়েত’ ঘোষণা করা হয়েছিল, কিন্তু এরপরও সোভিয়েত সরকার চেচেনদেরকে জার্মানি নাজী বাহিনীর সাথে সহায়তা করার দায়ে অভিযুক্ত করেছিল। কেননা নাজী বাহিনী ১৯৪২-৪৩ সালে শীতকালে চেচনিয়া-ইঙ্গুস্তিয়ার পশ্চিমাংশ নিয়ন্ত্রণে রেখেছিল। এমন ষড়যন্ত্রমূলক দাবীও করা হয়েছিল যে, চেচেনরা নাকি নাজী বাহিনীকে আজারবাইজানের পাহাড় দেখিয়ে দিয়েছিল যা কিনা তেল-ক্ষেত্র ছিল। আর ২য় বিশ্বযুদ্ধে সোভিয়েত বাহিনীতে যোগ দেওয়া চেচেনদের সংখ্যা তুলনামূলক কম ছিল।
চেচেন ও ইঙ্গুশ লোকজন নিজেরাই স্বাধীনতার দাবী করছিল সোভিয়েতের বিরুদ্ধে। এ সময় ২য় বিশ্বযুদ্ধে সোভিয়েতের পক্ষে অনেক চেচেন-ইঙ্গুশ রেড আর্মিতে যুদ্ধ করলেও সংখ্যায় তুলনামূলকভাবে কম হওয়ায় সোভিয়েত সরকার চেচেন ও ইঙ্গুশদের উপর ক্ষিপ্ত ছিল। তারই ফলশ্রুতিতে চেচেন ও ইঙ্গুশ মুসলমানদের গণহত্যার পরিকল্পনা করে তারা।
অপারেশন লেন্টিলঃ
১৯৪৩ সালের ১৩ অক্টোবর ১,২০,০০০ মুসলমানকে চেচনিয়া-ইঙ্গুশতিয়াতে ব্রিজ সংস্কারের জন্য পাঠানো হয়েছিল। অতঃপর ১৯৪৪ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারী ‘রেড আর্মি দিবস’-এ জোসেফ স্টালিনের অনুমতিক্রমে ল্যাভরেনটাই বেরিয়া তাদের সবাইকে পার্টি বিল্ডিং এ ডেকে আনল এবং তাদের জানিয়ে দেওয়া হল যে, জার্মানিদেরকে সহায়তার অভিযোগে শাস্তিস্বরূপ তাদের সবাইকে নির্বাসিত করা হল। সমগ্র জাতি থেকে ৫০০,০০০ মানুষকে সাইবেরিয়া, কাজাখস্তান ও কিরগিস্তানে নির্বাসিত করা হয়েছিল। নির্বাসিত এসব জনগণের মধ্যে ৪০-৫০% ছিল শিশু। নির্বাসিত করার পূর্বেই অনেককে শহীদ করা হয়েছিল, অনেককে নির্বাসন যাত্রায় শহীদ করা হয়েছিল, পরেও শহীদ করা হয়েছিল, কিন্তু সেগুলো হিসেবে আসে নি। ১৯৫৭ সাল পর্যন্ত নির্বাসিত এসব মুসলমান চেচনিয়াতে ফিরে যেতে পারেন নি। এই অপারেশনকে অপারেশন লেন্টিল বলা হয়।
খাইবাখ মুসলিম গণহত্যাঃ
নির্বাসিত মুসলমানদের তাপ নিরোধক কোন ব্যবস্থা ছাড়াই গাড়িতে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। ফলে প্রতিকূল আবহাওয়ায় অনেকেই যাত্রাপথেই ইন্তেকাল করেছিলেন। কিন্তু, ভয়াবহ ও পাশবিক এক ঘটনা ঘটে গেল খাইবাখ নামক অঞ্চলের নিকট। পথিমধ্যে প্রায় ৭০০ জন নারী ও শিশুসহ মুসলমান গ্রামবাসীকে সোভিয়েত কাফিরেরা তালাবদ্ধ করে দিয়ে তারা আগুন জ্বালিয়ে দেয়। ফলে সকলে জীবন্ত দগ্ধ হয়ে শাহাদতবরণ করেন। এমনকি যারা পালিয়ে যেতে চেষ্টা করেছিলেন, উনাদেরকেও গুলি করে শহীদ করা হয়েছিল। এমন ন্যাক্কারজনক কাজের জন্য ‘গেভেসিয়ানি’কে ‘ল্যাভরেন্টি বেরিয়া’ তাকে অভ্যরথনা জানায় (নাউযুবিল্লাহ)।
পরবর্তী গ্রীষ্মকালে চেচনিয়ার অনেক অঞ্চলের নাম পরিবর্তন করে রাশিয়ান নাম দেওয়া হয়। মসজিদ ও মাজার শরীফ ভেঙ্গে ফেলা হয়। চেচেন মুসলমানদের বিভিন্ন ঐতিহাসিক কিতাবাদি পুড়ে ফেলা হয়। চেচেন মুসলমানদের নাম-নিশানা এ সময় ইতিহাস ও এনসাইক্লোপিডিয়া থেকে মুছে ফেলা হয়। পরবরতীকালে ইতিহাসবিদগণ খাইবাখ গণহত্যার নমুনা পুনরুদ্ধার করেন।

নির্বাসন মুক্তিঃ
নির্বাসিত জীবনে মুসলমানেরা চরম কষ্টে দিনাতিপাত করেছিলেন। সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার ভয় সার্বক্ষণিক উনাদের যাতনা দিত। মুসলমানদেরকে নির্বাসনে দেওয়ার এ সুযোগে চেচেন লাইব্রেরীগুলো জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। চেচনিয়ার মুসলিম জনপদকে গ্রোজনী অবলাস্টে রূপান্তরিত করা হল এবং অনেক জমি বিভিন্ন রাজ্যের অংশ করে দেওয়া হল। এমনকি মুসলিম জনপদে শূন্য পড়ে থাকা বাড়িগুলোতে বিশ্বযুদ্ধে বাস্তুহারাদের থাকার ব্যবস্থা কর হল। পরিত্যক্ত বাড়িগুলোতে শুধুমাত্র ইহুদী ও মেসখেতিয়ান তুর্কিদের থাকতে দেওয়া হয়েছিল। এভাবেই চেচনিয়ার মুসলিম জনপদ থেকে মুসলমানদের নাম নিশানা মুছে ফেলার হীন ষড়যন্ত্র চালিয়েছিল স্টালিন। অবশেষে ১৯৫৩ সালে জালিম স্টালিনের মৃত্যু হলে ১৯৫৭ সালে সোভিয়েতের তৎকালীন সরকার এ অধ্যাদেশ জারী করল যে, নির্বাসিত মুলমানেরা সোভিয়েত ইউনিয়নের যে কোন প্রান্তে পুনরায় স্বাধীনভাবে বিচরণ করতে পারবে। কিন্তু মুসলমানেরা তাদের আবাসভূমিতে ফিরে এলেও কাফিরেরা আবারো নানা ছূতায় দাঙ্গা শুরু করে। ১৯৫৮ সালে এমনি এক সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হয়েছিল। ১৯৯০ সাল পর্যন্ত চেচেনিয়া ভাষার কোন স্কুল করতে দেওয়া হয় নি যাতে মুসলমানেরা জ্ঞানের দিক দিয়ে পিছিয়ে পড়েন।  

বর্তমান অবস্থাঃ
১৯৯০ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে গেলে দীর্ঘকালের রুশ দুঃশাসনের কবল থেকে পরিত্রাণ লাভের প্রত্যাশায় স্বাধীনচেতা চেচেনরা ১৯৯১ সালের সেপ্টেম্বরে গণভোটের আয়োজন করে। গণভোটে চেচনিয়ার অধিকাংশ জনগণ স্বাধীনতার পক্ষে রায় দেয়। কিন্তু তৎকালীন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট বরিস ইয়েলেৎসিন চেচনিয়ার স্বাধীনতা মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানান এবং চেচনিয়ায় প্রেসিডেন্টের শাসন জারি করে সেনাবাহিনী প্রেরণ করেন। কিন্তু চেচেন স্বাধীনতাকামীদের প্রবল প্রতিরোধের মুখে আগ্রাসী রুশ বাহিনী পিছু হটতে বাধ্য হয়। ১৯৯১ সালের ২৯ অক্টোবর চেচনিয়ায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত নির্বাচনে সোভিয়েত বাহিনীর সাবেক জেনারেল জওহর দুদায়েভ প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন এবং তিনি ২৪ নবেম্বর ১৯৯১ আনুষ্ঠানিকভাবে চেচনিয়ার স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। দুদায়েভের এ পদক্ষেপ রাশিয়ার শাসকগোষ্ঠী মেনে নিতে পারেনি।

১ম চেচেন যুদ্ধঃ
১৯৯৪ সালের ২৬ নবেম্বরের পর রাশিয়া চেচনিয়ায় ব্যাপক সামরিক অভিযান শুরু করে। আসলান মাশখাদভ নামক ব্যক্তির নেতৃত্বে বিদ্রোহীরা গেরিলা অপারেশন চালাতে থাকে। বিদ্রোহীদের দমনে রাশিয়ার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বরিস ইয়েলেৎসিন চেচনিয়ায় ৪০ হাজার সৈন্য প্রেরণ করে। রুশ বাহিনীর আশা ছিল দ্রুত বিদ্রোহীদের পরাস্ত করে চেচনিয়ার রাজধানী গ্রোজনীর নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করবে। কিন্তু পরাশক্তি রাশিয়া তীব্র প্রতিরোধের সম্মুখীন হয়। অবশেষে দুই মাস ধরে তীব্র লড়াইয়ের পর রুশ বাহিনী গ্রোজনী অধিকার করে। ফলে চেচেন স্বাধীনতাকামীরা গেরিলা যুদ্ধের আশ্রয় গ্রহণ করে। গ্রোজনী দখলের দু'বছর পর যখন বেসামরিক শহীদান নাগরিকের সংখ্যা প্রায় ৫০,০০০ এ পৌঁছায়, তখন রাশিয়া সেখান থেকে তার সৈন্য প্রত্যাহার করে নেয় এবং অস্ত্রবিরতির ঘোষণা দেয়। রাশিয়ার এ প্রত্যাখ্যান সম্পন্ন হয় ১৯৯৭ সালে। তবে চেচেন বিদ্রোহীরা এ অস্ত্রবিরতি প্রত্যাখ্যান করে রুশ সরকারের বিরুদ্ধে তাদের সংগ্রাম অব্যাহত রাখে।
সুসংবাদ এই যে, ইয়ান্দারবিভের প্লাটফর্ম প্রকাশ্যে একটি মুসলিম রাজ্য ছিল যেখানে শরীয়াহ আইন জারী ছিল এবং বৈদেশিক নীতিও ইসলামের আদলেই হত। আসলান মাসকাদভ ১৯৯৭ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়। এ সময় সে অর্থনৈতিক বিপর্যয় কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করেছিল। চেচনিয়ান তুমুল বিদ্রোহের মুখে মাসকাদভ ১৯৯৮ সালে ‘ইচকারিয়া’তে ইসলামিক প্রজাতন্ত্রকে সম্মতি দেয় এবং শরীয়াহ আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা হয়।

২য় চেচেন যুদ্ধঃ
১৯৯৯ সালের আগস্টে চেচেন ও আরবীয়ান বিদ্রোহীগণ শামিল বাসায়েভ ও আমির খত্তাবের নেতৃত্বে দাজেস্তানে স্বাধীনচেতা যুদ্ধ-বাহিনী গঠন করেন। চেচেন বিদ্রোহীদের তৎপরতা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেলে তৎকালীন রাশিয়ার নতুন প্রধানমন্ত্রী ভ্লাদিমির পুতিন তাদের বিরুদ্ধে ১৯৯৯ সালের ১লা অক্টোবর কঠোর সামরিক অভিযান চালায়। রাশিয়ান বাহিনী চেচনিয়াতে ঢুকে পড়ে। ওই রক্তক্ষয়ী সামরিক অভিযানের পরও বিদ্রোহীদের নির্মূল করা সম্ভব হয়নি। বিদ্রোহীদের তৎপরতা অব্যাহত থাকে। আর ৯/১১ আমেরিকার ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে আক্রমণের পর রাশিয়া চেচেনদেরকে সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচয় দেওয়ার মোক্ষম সুযোগ পায়। ২০০৯ সালের এপ্রিলে রাশিয়া মুসলমান নিধনের এ সন্ত্রাসী আক্রমণের সমাপ্তি ঘোষণা করে এবং বিদ্রোহী বাহিনীর নেতা আহমদ জাকায়েভ ২০০৯ সালের ১লা আগস্ট যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেন।
এভাবেই চেচনিয়াতে বিভিন্ন ষড়যন্ত্রের জাল ফেলে চলছে মুসলিম নিধন, মুসলমানদের উপর অকথ্য নির্যাতন এবং মুসলিম গণহত্যা। ১৯৯৪ সালেই ১ম চেচেন যুদ্ধে প্রাক্কালে ডজনের মত গণকবরের সন্ধান পাওয়া যায়। ২০০৮ সালের জুনে চেচনিয়াতে ৫৭টি গণকবর নিবন্ধন করা হয়েছে। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এর রিপোর্ট অনুযায়ী, ১৯৯৯ সালে ২য় চেচেন যুদ্ধের প্রাক্কালে ৫০০০ বেসামরিক শহীদানসহ হাজার হাজার শহীদকে অনেক অজানা স্থানে কবর দেওয়া হয়েছে। ২০০৮ সালে গ্রোজনীতে ৮০০ শহীদের এক বিরাট গণকবর খুঁজে পাওয়া যায় যা ১৯৯৫ সালে সংঘটিত হয়েছিল। চেচনিয়ান মুসলমানদের উপর যুগের পর যুগ ধরে রাশিয়ান বর্বর কাফিরেরা নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে, অথচ নিপীড়িত মুসলমানদেরকেই দোষী সাব্যস্ত করছে কাফিরগোষ্ঠী। আসুন, চেচনিয়ান অসহায় মুসলমানদের উপর চালানো নির্যাতন, সম্ভ্রমহরণ, গণহত্যার ইতিহাস সকল মুসলমানের জেনে সেটার প্রতিবাদ করি এবং এসব থেকে শিক্ষা নেই।

সূত্রঃ
http://en.wikipedia.org/wiki/Khaibakh_massacre

জ্বলতে জ্বলতেই স্বাধীন হবে কাশ্মীর

0 মন্তব্য(গুলি)

ভারত-পাকিস্তানের স্বাধীনতার কালে জন্মু ও কাশ্মীর ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের আর দশটা অঙ্গরাজ্যের মতো ছিল না, এটি ছিল ১৪০ টি পূর্ণ ক্ষমতা সম্পন্ন করদ রাজ্যের অন্যতম। ফলে ব্রিটিশ শাসনের অবসানে এই রাজ্যগুলি স্বাধীন থাকবে নাকি ভারত পাকিস্তানের সাথে যুক্ত হবে তা নির্ধারণের স্বাধীনতা ছিল ঐ রাজ্যগুলিরই। জন্মু-কাশ্মীরের রাজা হরি সিং স্বাধীন থাকার ইচ্ছাই পোষণ করেছিলেন। কিন্তু কিছু দিনের মধ্যেই পরিস্থিতির চাপে পড়ে তিনি বাধ্য হয়েছিলেন ভারতের সাহায্য গ্রহণ করতে। ১৯৪৭ এর সেপ্টম্বর মাসে পুঞ্চ অঞ্চলের অধিবাসীরা জন্মু-কাশ্মীরের সরকারের বিরুদ্ধে একটি অভ্যুত্থান সংগঠিত করে। কিছুদিনের মধ্যেই উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশের পার্বত্য অধিবাসীরা জন্মু-কাশ্মীরের উপর আক্রমণ চালায়। এ সবের পেছনে পাকিস্তানের মদদও ছিল। এরকম একটা পরিস্থিতিতেই ১৯৪৭ সালের ২৬ অক্টোবর ভারত ও জন্মু-কাশ্মীরের মধ্যে একটি “অন্তর্ভুক্তি সংক্রান্ত দলিল”(Instrument of Accession) স্বাক্ষরিত হয়। শর্তছিল ভারত কেবল প্রতিরক্ষা ও পরিরাষ্ট্র নীতি বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারবে, অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নয় এবং কাশ্মিরের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবার পর পর গণভোটের মাধ্যমে নির্ধারণ করা হবে কাশ্মীর ভারতের সাথে থাকবে নাকি স্বাধীন থাকবে। সার্বভৌমত্বের ব্যাপারে চুক্তির ৮ ধারায় স্পষ্ট উল্ল্যেখ ছিল: “Nothing in this Instrument affects the continuance of my Sovereignty in and over this State, or, save as provided by or under this Instrument, the exercise of any powers, authority and rights now enjoyed by me as Ruler of this State or the validity of any law at present in force in this State.” অর্থাত হরি সিং পরিস্কার করে দিয়েছিলেন এই প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত চুক্তি মানে এই না যে তিনি জন্মু-কাশ্মীরের স্বাধীনতা ভারতের হাতে তুলে দিচ্ছেন। শুধু তাই না, তিনি ভারতের ভবিষ্যত কোন সংবিধান মেনে চলবেন এরকম কোন গ্যারেন্টিও দেননি, চুক্তির ৭ ধারায় বলা আছে:“Nothing in this Instrument shall be deemed to commit in any way to acceptance of any future constitution of India or to fetter my discretion to enter into agreement with the Government of India under any such future constitution. ”
(সুত্র: Instrument of Accession of Jammu and Kashmir State 26 October, 1947, Legal Document No 113
Click This Link)

ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু ঐ চুক্তি স্বাক্ষরের ৬ দিন পর ঘোষণা করেন:
“We have declared that the fate of Kashmir is ultimately to be decided by the people. That pledge we have given, and the Maharaja has supported it, not only to the people of Kashmir but to the world. We will not and cannot back out of it. We are prepared when peace and law and order have been established to have a referendum held under international auspices like the United Nations. We want it to be a fair and just reference to the people and we shall accept their verdict. I can imagine no fairer and juster offer.”
(সুত্র: Click This Link)

অর্থাত “ আমরা ঘোষণা করেছি যে কাশ্মিরের ভাগ্য কাশ্মিরের জনগণই নির্ধারণ করবে। শুধু কাশ্মীরের জনগণই নয়, সারা দুনিয়ার কাছে আমরা এই প্রতিজ্ঞা করেছি আর মহারাজা আমাদের সমর্থন দিয়েছেন। এর অন্যথা আমাদের দ্বারা সম্ভব নয়। আমরা প্রস্তুত আছি, যে মুহুর্তে কাশ্মীরে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে এবং শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে, সে মুহর্তেই জাতিসংঘের মতো কোন আন্তর্জাতিক নিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠানের অধিনে গণভোটের আয়োজন করা হবে। আমরা চাই এ নির্বাচন নিরপেক্ষ হবে, জনগণের মতামতের প্রতিফলন ঘটবে এবং আমরা এই জনরায় মেনেও নেব। এর চেয়ে ভালো এবং ন্যায়বিচারমূলক কোন প্রস্তাব তো আর আমার মাথায় আসছে না।” হ্যা, ন্যায় বিচারই বটে! নেহেরু এ কথা বলার পর ৬৩ বছর পার হতে চলেছে, ভারতীয় সাম্রজ্যবাদের ভয়ংকর থাবার নীচে থেকে কাশ্মীরে আর শান্তি-শৃঙ্খলা আর ফিরে এল না, গণভোটের তো প্রশ্নই আসে না!

মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ ইরাক দখলের কালে ১৬৬ জন ইরাকী নাগরিক প্রতি একজন করে মার্কিন সেনা মোতায়েন করেছিল। আর কাশ্মীরে ২০ জন নাগরিক প্রতি একজন ভারতীয় সেনা বা আধা সেনা মোতায়েন আছে। কাশ্মীরে মোট জনসংখ্যা ১ কোটির সামান্য বেশি। আর ভারতীয় সেনা মোতায়েন হলো ৩ লক্ষ, ৭০ হাজার রাষ্ট্রীয় রাইফেল সেনা ও ১ লক্ষ ৩০ হাজার সিআরপিএফ জোয়ান। এছাড়াও আছে রাজ্যের লাখ খানেক পুলিশ ও গোয়েন্দা বাহিনী। এই সশস্ত্র বাহিনীগুলোকে দেয়া হয়েছে মানুষ খুন করার নিরঙ্কুশ ক্ষমতা। ১৯৯০ সালের ৫ জুলাই কাশ্মীরে সামরিক বাহিনীর বিশেষ ক্ষমতা আইন (আরমড ফোর্সেস স্পেসাল পাওয়ার এক্ট) জারি করে তাদের হাতে এই ক্ষমতা তুলে দেয়া হয়। এই আইনের ৪(এ) ধারায় বলা আছে যে, সশস্ত্র সামরিক বাহিনী যে কোন সন্দেহভাজন নাগরিককে হত্যা করতে পারবে।(সূত্র: স্যোসালিস্ট ইউনিটি সেন্টার অব ইন্ডিয়ার বাংলা মুখপাত্র গণদাবীর ৬-১২ আগষ্ট সংখ্যা http://www.ganadabi.in/issues2010/gd080610.pdf) এই বিশেষ ক্ষমতায় বলিয়ান হয়ে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী গোটা কাশ্মীর উপত্যকা জুড়ে হত্যা, ধর্ষণ, লুণ্ঠন ও নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে।

এই পরিপ্রেক্ষিতকে মাথায় রেখে আমরা সাম্প্রতিক বিক্ষোভের কারণ খোজার চেষ্টা করব।

৮ই জানুয়ারী, ২০১০, ১৬ বছর বয়সী ইনায়েত খান বিকেলে কোটিং সেরে বাড়ি ফিরছিল। শ্রীনগরের বাদশা চকে প্রতিবাদ সভা চলছিল। পুলিশ প্রতিবাদীদের “ছত্রভঙ্গ করার” উদ্দেশ্যে গুলি চালায়। গুলিবিদ্ধ ইনায়েত, পরেরদিন হাসপাতাল থেকে বাড়ি না গিয়ে কবরস্থানের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে।

৩১ জানুয়ারী, ১৩ বছরের ওমর ফারুক শ্রীনগরের গণি মেমরিয়াল স্টেডিয়ামে বন্ধুদের সঙ্গে ক্রিকেট খেলছিল। পুলিশের কাদানে গ্যাসের শেলের আঘাতে সেদিন তার সব খেলা সাঙ্গ হয়।

৫ ফেব্রুয়ারী, কাশ্মীর যেদিন ওয়ামিকের শোকপালনে স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল, সেইদিন আর এক বালক জাহিদ ১৪ বছর বয়সে বিএসএফএর গুলিতে প্রাণ হারায়।

১৩ এপ্রিল, সোপুরের সরকারি স্কুলের একাদশ শ্রেণীর ছাত্র ১৭ বছরের যুবক যুবের আহমেদ ভাট ঝিলাম নদীর পাড়ে বসেছিল। বিক্ষোভরত কিছু মানুষ পুলিশের তাড়া খেয়ে সেখানে চলে আসে। পুলিশ নির্বিচারে সবার উপর ঝাপিয়ে পড়ে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, পুলিশ জুবের সহ প্রত্যেককে নদীতে ঝাপ দিতে বাধ্য করে। অন্যরা সাতরে পাড়ে উঠতে সক্ষম হলেও, জুবের তলিয়ে যেতে থাকে। মাঝিরা বাচাবার চেষ্টা করেছিল। পুলিশ ঝাকে ঝাকে কাদানে গ্যাসের শেল ছুড়তে থাকায়, তারা জুবেরের কাছে পৌছাতে ব্যর্থ হয়। জুবের প্রাণ হারায়। ২০০৬ সালে জুবেরের বড় ভাই এহমান-উল-হক পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারিয়েছিল।

রাজৌরির তোফায়েল আহমেদ মাত্তু তার পিতামাতার একমাত্র সন্তান এবং দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্র। ১১ জুন টিউশানি শেষে সে বন্ধুদের সাথে বাড়ি ফিরছিল। কাধে ছিল স্কুল ব্যাগ। কাছেই হয়তো কোথাও বিক্ষোভ চলছিল, তোফায়েল জানতো না। একদল যুবক পুলিশের তাড়া খেয়ে দৌড়াচ্ছিল। তোফায়েলদের দেখতে পেয়ে পুলিশ তাদেরও পিছু নেয়। ভয় পেয়ে কিশোর তোফায়েলরা সামনের গণি মেমরিয়াল স্টেডিয়ামে ঢুকে পড়ে। পুলিশ স্টেডিয়ামে ঢুকে গুলি চালায়। তোফায়েলের আর বাড়ি ফেরা হলো না। গুলি লেগে তোফায়েলের মস্তক চুর্ণ হয়ে যায়।

১২ জুন, সান্ধ্য-আইন এবং সমস্ত নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে তোফায়েলের অন্তিম যাত্রায় হাজার হাজার মানুষের ঢল নামে। পুলিশ শবযাত্রাকেও রেহাই দেয় নি। মিছিল ছত্রভঙ্গ করতে শবযাত্রীদের উদ্দেশ্যে কাদানে গ্যাস এবং ফাকা গুলি ছুড়ে। মিছিলে অংশগ্রহণকারীদের পাচজন এবং একজন চিত্র সাংবাদিক আহত হন। পুলিশের আক্রমণ তুচ্ছ করে তোফায়েলের আত্মীয় পরিজন, বন্ধু-বান্ধব, বৃদ্ধ ও যুবক শত শত শোকাহত জনতা শেষ পর্যন্ত স্থানীয় ঈদগাহে সমবেত হতে এবং শেষকৃত্য সম্পন্ন করতে সক্ষম হয়। ঈদগাহ থেকে ফেরার পথেও পুলিশ দলবদ্ধ জনতার উপর কাদানে গ্যাস বর্ষণ করে।

সমস্ত কাশ্মীর উপত্যকা জুড়ে তোফায়েল হত্যার বিরুদ্ধে স্বত:স্ফুর্ত বিক্ষোভ শুরু হয়। বিক্ষুব্ধ জনতার উপর পুলিশ নির্মম ভাবে লাঠি চালায়। রাজৌরিতে সিআরপিএফ-এর রাইফেলের বাটের আঘাতে সাঙ্ঘাতিক আহত হয় রফিক বাঙরু। বয়স ২৪। সংকটাপন্ন অবস্থায় তাকে হাসপাতালে ভার্তি করা হয়। এক সপ্তাহ জীবণ-মরণ লড়াইয়ের পর রফিক ১৯ জুন মৃত্যুর কাছে আত্মসর্ম্পন করতে বাধ্য হয়। রফিক তাদের পরিবারের সপ্তম বলি। ১৯৯০ সালে গোলাম রসুল বাঙরুকে বিএসএফ তুলে নেয় যাওয়ার পর থেকে নিখোজ। বাকিরা বিভিন্ন সময়ে পুলিশের গুলিবর্ষণের শিকার।

২০ জুন, রফিককে কবর দিয়ে, যখন রফিকের আত্মীয়-বন্ধুরা ফিরে আসছিলেন, পথিমধ্যে তারা আবারও আক্রান্ত হন। পাচজন সিআরপিএফ এর গুলিতে আহত হয়। কিন্তু ১৭ বছরের কিশোর জাভেদ আহমেদ মাল্লাকে বাচানো যায়নি। জাভেদ ছিল তার পিতামাতার একমাত্র পুত্র সন্তান।

২৫ জুন, সোপুরে তথাকথিত, সংঘর্ষে দুজন যুবক সিআরপিএফ এর গুলিতে নিতহ হয়। পুলিশ ঐ দুজনের দেহ তুলে নিয়ে যায়। পুলিশি অবরোধ উঠে যাওয়ার পর স্থানীয় মানুষজন নিহতদের লাশ ফেরত দেয়ার দাবীতে বিক্ষোভ শুরু করে। টহলদারী সিআরপিএফ বাহিনী কোন রকম সতর্কতা না দেখিয়ে বক্ষোভকারী জনতার উপর গুলি চালায়। ইলেক্ট্রিক মিস্ত্রি শাকিল আহমেদ গণাই(২৪) যন্ত্রপাতি কিনতে বেরিয়েছিল। গুলি লেগে রাস্তাতেই লুটিয়ে পড়ে। ফিরদৌস আহমেদ কাকরু(২০) বাগানের পরিচর্যা করছিল। সিআরপিএফ তাকেও ছাড়ে নি। দুই যুবকের তাতক্ষণিক মৃত্যু হয়।

২৭ জুন পুলিশের গুলিতে বিলাল আহমেদ ওয়ানির মৃত্যু হয়। সাকিল আর ফিরদৌস হত্যার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল প্রদক্ষিণ করছিল সোপুরের রাস্তা। রাজ্য সরকারের জন্য স্বাস্থ্য কারিগরি দপ্তরের শ্রমিক বিলাল মিছিল দেখছিল। পুলিশ মিছিল লক্ষ্য করে গুলি চালালে বিলাল মারা যায়।
২৮ জুন সোপুরে আবারও গুলি চলে। দুজনের মৃত্যু হয়। তাদের একজন ৯ বছরের বালক তাকির আহমেদ। অপরজন কলেজের ১ম বর্ষের ছাত্র তাজামুল বসির ভাট।

২৯ জুন পুলিশের গুলিতে অনন্তনাগে আরো তিনজন নিহত হয়- ইন্তিয়াক আহমেদ খান্ডে(১৫), সুজাত্তুল ইসলাম(১৮) এবং ইমতিয়াজ আহমেদ ইতু(১৮)। (সূত্র: এই মৃত্যু তালিকা নেয়া হয়েছে কলকাতা থেকে প্রকাশিত মাসিক অনীক এর জুলাই ২০১০ সংখ্যা থেকে)
........... তালিকা আর কত বড় করতে হবে! এ হত্যাকান্ডগুলোর ধরণ/ধারণ খতিয়ে দেখলে অনুমান করা শক্ত নয় একটা জনগোষ্ঠীর তরুণ অংশকে একরকম খেয়াল খূশি মতো খুন করার প্রতিক্রিয়া সেই জনমানসের উপর কেমন হতে পারে। ইসরায়েলী দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনি মুক্তিকামী জনতার মতোই পাথর হাতে বুলেটের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে এসেছে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সাধারণ মানুষ। হত্যা-বিক্ষোভ-হত্যা চলছেই। সাম্প্রতিক বিক্ষোভের ১০০তম দিনে হত্যাকান্ডের সংখ্যা ছিল ৯৬। ইতোমধ্যে তা ১০০ ছাড়িয়ে গেছে। আর পুরনো হত্যাকান্ডগুলোর কথা না হয় নাই তুললাম। ইতোমধ্যে ভারতীয় সামরিক বাহিনীর হাতে কাশ্মীরের ৭০ হাজার মানুষ খুন হয়েছে যার অধিকাংশই যুবক। কাজেই এরকম হত্যাকান্ড নির্যাতন লুণ্ঠনই কাশ্মীরের দিনলিপি। একদিকে সামরিক বাহিনীর নির্যাতন অন্যদিকে অর্থনৈতিক বৈষম্য, তীব্র বেকারত্ব, শিল্প-কৃষির অনগ্রসরতা ইত্যাদি কাশ্মীরবাসীকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় দখলদার ভারতের সাথে তাদের সম্পর্কের স্বরুপ কি। কলকাতা থেকে প্রকাশিত মাসিক পত্রিকা অনীক এর জুলাই ২০১০ সংখ্যায় প্রণব দে লিখেছেন:”১৯৪৭ থেকে কাশ্মীর, ভারত ও পাকিস্তান- এই দুই পক্ষের মধ্যে পিষ্ট হচ্ছে। এটা দুপক্ষের মর্যাদার লড়াই অথবা অন্যবিচারে কাশ্মীর দুপক্ষেরই সেফটি ভাল্ব। শাসক শ্রেণীর সংকট মোচনে সীমান্ত যুদ্ধ বেশ শক্তিশালী দাওয়াই। আর কাশ্মীরের মানুষ(আজাদ কাশ্মীর সহ) এই রাজনৈতিক পুজর্চনায় বলিপ্রদত্ত পশু।” সাম্প্রতিক বিক্ষোভ সহ ক্ষণে ক্ষণে জ্বলে উঠে কাশ্মীরবাসী পরিস্কার বুঝিয়ে দিয়েছেন বলির পাঠা আর তার থাকতে চাননা। তারা স্বাধীন কাশ্মীরেরই স্বপ্ন দেখেন।
সম্প্রতি লন্ডনের চেথাম হাউসের চালানো এক জরিপেও এই তথ্য উঠে এসেছে। ভারত নিয়ন্ত্রিত জন্মু-কাশ্মীর আর পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত আজাদ কাশ্মীর উভয় অংশের মানুষের উপর চালানো এই জরিপে দেখা যায়, যদি হঠাত গণভোটের মাধ্যমে বেছে নিতে বলা হয় তারা ভারতের সাথে না পাকিস্তানের সাথে থাকতে চায় না স্বাধীন হতে চায়, তাহলে তাদের মধ্যে আজাদ কাশ্মীরের ৪৪% স্বাধীন কাশ্মীর এবং ৫০% পাকিস্তানের সাথে যুক্ত থাকার পক্ষে। অন্যদিকে জন্মু-কাশ্মীরের মাত্র ২৮% ভারতের সাথে থাকার পক্ষে রায় দিয়েছেন অন্যদিকে ৪৩% অধিবাসী-ই স্বাধীন কাশ্মীর বেছে নেয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন।

যে জনগোষ্ঠীর নারী-পুরুষ-শিশু-যুবা নির্বিশেষে পাথর হাতে রাস্তায় নেমে আসে দখলদারের বুলেট মোকাবেলা করতে তাদের আর দাবীয়ে রাখার সাধ্য কারো নেই। আমরা কাশ্মীরবাসীর স্বাধীনতা আন্দোলনের সাথে সংহতি প্রকাশ করছি।