Translate

আরেক নির্জাতিত মুসলিম উইঘুর

Saturday, June 25, 2016

0 মন্তব্য(গুলি)

 চীনের পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ ঝিনঝিয়াংয়ে উইঘুর সম্প্রদায়ের আবাস। তবে পূর্ব ও মধ্য এশিয়ায় কিছু কিছু এলাকাতেও রয়েছে এ জাতির মানুষেরা। দ্রুতহারে কমে আসা এই জাতিটি কিছুদিন পরপরই বিশ্ব আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসে। রাষ্ট্রীয় দমন-নিপীড়নের কারণে প্রতিনিয়ত এদের রক্তে রঞ্জিত হচ্ছে চীন ।

কারা এই উইঘুর


উইঘুর জাতির ইতিহাস প্রায় ৪ হাজার বছর আগের। মূলত এরা স্বাধীনপূর্ব তুর্কিস্তানের অধিবাসী। পূর্ব তুর্কিস্তান প্রাচীন সিল্ক রোডের পাশে অবস্থিত মধ্য এশিয়ার একটি দেশ, যার চতুর্পাশ্বে চীন, ভারত, পাকিস্তান, কাজাখস্তান, মঙ্গোলিয়া ও রাশিয়ার অবস্থান। এ অঞ্চলের বেশিরভাগ দেশেই উইঘুর সম্প্রদায়ের বাস রয়েছে। ২০০৯ সালের এক হিসাব অনুযায়ী এসব দেশের মধ্যে চীনের ঝিনঝিয়াংয়ে ১ কোটি ২০ হাজারের মতো উইঘুর লোক বসবাস করে। কাজাখস্তানে ২ লাখ ২৩ হাজার, উজবেকিস্তানে ৫৫ হাজার, কিরগিজস্তানে ৪৯ হাজার, তুরস্কে ১৯ হাজার, রাশিয়ায় ৪ হাজার, ইউক্রেনে ১ হাজারের মতো উইঘুর সম্প্রদায়ের লোক বাস করে।

এদের ভাষা উইঘুর। প্রাচীনকালে এ ভাষার বর্ণমালা উইঘুর হরফে লেখা হতো। নবম শতকের আগ পর্যন্ত পূর্বতুর্কিস্তান বৌদ্ধদের এক বড় তীর্থভূমি ছিল। এরপর তারা মুসলমানদের সংস্পর্শে এসে ইসলাম গ্রহণ করতে থাকে। বর্তমানে প্রায় ৯০ লাখ মুসলিম উইঘুর পূর্বতুর্কিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনপদে পরিণত হয়েছে। ইসলাম গ্রহণের পর ১৩শ শতাব্দী থেকে বিংশ শতাব্দী পর্যন্ত উইঘুর বর্ণমালা আরবি হরফে লেখা হতো। এরপর কিছুদিন অন্য হরফে লেখা হলেও ১৯৮৫ সাল থেকে আবারো সরকারিভাবে আরবি হরফ চালু হয়েছে।

বিংশ শতাব্দীর প্রথমদিকেও প্রাচীন এ সম্প্রদায়ের লোকদের উইঘুর না বলে বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন নামে ডাকা হতো। মূলত ১৯২১ সালে উজবেকিস্তানের রাজধানী তাশখন্দে একটি সম্মেলনের পর উইঘুররা তাদের পুরনো

পরিচয় ফিরে পায়। ভাষাবিদ ও ইতিহাসবেত্তারা এ ব্যাপারে নিশ্চিত হয়েছেন যে, উইঘুর শব্দটি উয়্যুঘুর শব্দ থেকে এসেছে। এর অর্থ সংঘবদ্ধ ।

১৯১১ সালে মাঙ্কু সা¤্রাজ্য উৎখাতের মাধ্যমে পূর্ব তুর্কিস্তানে চীনা শাসন চালু হয়েছে। কিন্তু স্বাধীনচেতা বীর উইঘুররা এই বৈদেশিক শাসনের সামনে মাথা নোয়ায়নি। এ কারণে ১৯৩৩ এবং ১৯৪৪ সালে তারা দুবার চীনাদের সাথে সাহসিকতার চরম পরাকাষ্ঠা প্রদর্শন করে স্বাধীনতা অর্জন করে। কিন্তু ভাগ্য তাদের অনুকূলে ছিল না। ফলে ১৯৪৯ সালে আবারো তারা চীনা কমিউনিস্টদের হাতে পরাজিত হয় আর ঝিনঝিয়াং উইঘুর স্বায়ত্তশাসিত প্রদেশ গড়ে ওঠে। তখন ঝিনঝিয়াংয়ে কমিউনিস্ট পার্টির গভর্নর ছিলেন সাইফুদ্দিন আজিজি ।

কষ্ট ও নির্যাতন ভোগ

চীনের আদি মুসলিম বসতি স্থাপনকারীরা সব ধরনের কষ্ট ও নির্যাতন সহ্য করেছেন। মানচু রাজবংশের (১৬৪৪-১৯১১) স্বৈরশাসনকাল ছিল মুসলমানদের জন্য এক কালো অধ্যায়। এই মেয়াদে মুসলমানদের বিরুদ্ধে ৫টি অভিযান পরিচালিত হয়। লানচু যুদ্ধ, ১৮২০-২৮, কানিও যুদ্ধ ১৮৩০, সিনকিয়াং যুদ্ধ ১৮৪৭, ইউনান যুদ্ধ ১৮৫৭ এবং শানসি যুদ্ধ ১৮৬১। এই সময়ে মুসলমানদের নির্বিচারে হত্যা করা হয় এবং মসজিদগুলো সম্পূর্ণ গুড়িয়ে দেয়া হয়। এরকম প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও ইসলামের এক বীর ইয়াকুব বেগ (১৮২০-৭৭) গোটা তুর্কিস্তান মুক্ত করেন এবং সেখানে ইসলামি আইন (১৮৬৭-৭৭) প্রতিষ্ঠার প্রাণপন প্রচেষ্টা চালান। ১৯৪৯ সালে কমিউনিস্টরা পূর্ব তুর্কিস্তানের (ঝিনঝিয়াং) দখল নেয়ার পর এই অঞ্চলের সাথে বাইরের যোগাযোগ বলতে গেলে একেবারে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। সাংবাদিকদেরকেও সেখানে যেতে দেয়া হয় না। বিবিসির সাংবাদিককেও সেখান থেকে তাড়িয়ে দেয়া হয়। সোভিয়েত ইউনিয়নের স্ট্যালিনবাদী শুদ্ধি অভিযানের মতোই এখানে অভিযান চলে। তাই তখনকার পরিস্থিতি সম্পর্কে বিশদ বর্ণনা পাওয়া যায় না।

চীনে মুসলমানদের সংখ্যা

সিআই-এর ওয়ার্ল্ড ফ্যাক্টবুক অনুযায়ী চীনের মোট জনসংখ্যার ১-২ শতাংশ মুসলিম। অপরদিকে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা প্রতিবেদনে দেখা যায়, মুসলিমরা চীনা জনসংখ্যার ১.৫ শতাংশ। সাম্প্রতিক আদমশুমারির হিসাব মতে, চীনে প্রায় ২ কোটি ২০ লাখ মুসলমানের আবাস, যা চীনের মোট জনসংখ্যার ১.৬ শতাংশ। ২০১১ সালের হিসাব অনুযায়ী চীনের বর্তমান জনসংখ্যা ১৩৩ কোটি ৬৭ লাখ ১৮ হাজার। অপরদিকে চীনের মুসলিম সংগঠনগুলোর দাবি অনুযায়ী, চীনে মুসলমান সংখ্যা সরকারি রিপোর্টের চেয়ে অনেকগুণ বেশি। তাদের মতে চীনে সাড়ে ৬ কোটি থেকে ১০ কোটি মুসলমান বাস করে, যা চীনা জনসংখ্যার সাড়ে ৭ শতাংশ। চীনের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ ঝিনঝিয়াং, গানসু ও নিংঝিরায় মুসলমানদের সবচেয়ে বেশি বসবাস। এছাড়া দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের ইউনান প্রদেশ এবং মধ্য চীনের হেনানে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মুসলমানের বসবাস রয়েছে।

উইঘুর মুসলমান : খুন-হত্যা, গুম-অপহরণ যাদের নিত্যসঙ্গী

তুর্কিস্তান থেকে চীনে আসা সম্প্রদায় উইঘুর। মঙ্গোলিয়া এবং তিব্বতের মাঝখানে এক পাহাড়ি ভূমিতে বসবাসকারী এই জাতিটি সম্পর্কে প্রচলিত ধারণা হলো, তারা অতিমাত্রায় সাহসী যোদ্ধা এবং দুর্দমনীয়। একসময় এশিয়া মহাদেশের বড় অংশ যার দখলে ছিল, সেই চেঙ্গিস খাঁ এবং হালাকু খাঁর বাহিনীতে এদের যথেষ্ট সমাদর ছিল। কিন্তু ১৯৪৯ সালে তুর্কিস্তান চীনা বিপ্লবের সময় চীনের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়। চিরস্বাধীনচেতা ও মুসলিম সংখ্যাঘরিষ্ঠ এই জাতিটি বর্তমানে চীনের বিরুদ্ধে স্বাধিকার ও স্বাধীনতার জন্য প্রাণপন লড়াই করছে। নিজস্ব ভাষা ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রক্ষার জন্য প্রতিবছর শতশত উইঘুর মুসলিম যুবক শাহাদতের অমীয় সুধা পান করছেন। আর চীন সাম্যবাদের নামে তাদের সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্যকে বিলুপ্ত করার এক রক্তক্ষয়ী হোলিখেলায় মেতে উঠেছে। শত শত নিহতের সংখ্যা প্রায়ই মাত্র ১২ জন, অথবা ১৭ জন নিহত বলে রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রচার করছে। প্রতিরোধ করার নিমিত্তে অস্ত্র হাতে নিলেও তাদের অন্যায়ভাবে বিশ্বের সামনে ফলাও করে উপস্থাপন করা হচ্ছে উগ্রপন্থি, সন্ত্রাসী, মানবতার শত্রু আর দাঙ্গা সৃষ্টিকারী হিসাবে। ধর্মীয় এবং জাতিগত কারণে তারা বারবার চীনা প্রশাসনযন্ত্রের নির্যাতনে নিষ্পেষিত হলেও তাদের দিকেই তোলা হয় অভিযোগের তীর। মামলা হামলায় বিপর্যস্ত হয় তাদের সাধারণ জীবন। বিষয়টি স্পষ্টভাবে ফুটে ওঠার জন্য নমুনাস্বরূপ কয়েকটি ঘটনা নিম্নে তুলে ধরছি, যা থেকে ঘটনার ভয়াবহতা সম্পর্কে সামান্য ধারণা পাওয়া যাবে।

হান সম্প্রদায় বরাবরই হামলা চালায় উইঘুর মুসলমানদের ওপর। বর্তমানে ঝিনঝিয়াংয়ের ৪৫ শতাংশ উইঘুর মুসলমান। স্বাধিকার প্রতিষ্ঠায় তারা দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন চালিয়ে আসছে। এর ফলে চীনা প্রশাসনের মদদে সেখানে অবৈধভাবে বসতি স্থাপনকারী হান বৌদ্ধদের হাতে চরম জুলুম-নির্যাতনের শিকার

হচ্ছেন উইঘুররা। তবে সবচেয়ে বড় দাঙ্গার ঘটনাটি ঘটে ২০০৯ সালের জুলাই মাসে। ওই সময় ঝিনঝিয়াংয়ের আঞ্চলিক রাজধানী উরুমকিতে মুসলমানদের ওপর হান সম্প্রদায়ের হামলায় অন্তত ২০০ জন উইঘুর প্রাণ হারায়। এ ঘটনায় আহত হয় ১ হাজার ৭০০ জনেরও বেশি উইঘুর মুসলিম। চীনা কতৃপক্ষ ঝিনঝিয়াংয়ের সহিংসতার জন্য চিরাচরিত নিয়ম অনুযায়ী উগ্রপন্থি মুসলমানদের! দায়ী করে। তবে উইঘুররা বিবিসি প্রতিনিধিকে জানান, সরকার তাদের ওপর কঠোর জুলুম-নিপীড়নকে বৈধতা দেয়ার লক্ষ্যে উগ্রপন্থিদের হুমকিকে অতিরঞ্জিত করে প্রচার করছে ।

গত ২০১৩ সালের ৩০ ডিসেম্বরে উত্তেজনাপূর্ণ ঝিনঝিয়াংয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে ৮ জন উইঘুর মুসলিম নিহত হন। যদিও কতৃপক্ষের অভিযোগ, ছুরি ও বিস্ফোরকদ্রব্য নিয়ে ৯ জন উইঘুর মুসলিম যুবক থানায় হামলা চালায় এবং গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। চীনের সরকারি বার্তাসংস্থা সিনহুয়ায় প্রশাসন এ অভিযোগ করলেও তা সম্পূর্ণ অস্বীকার করে উইঘুর কংগ্রেস বলেছে, এই হত্যাকা- শান্তিকামী সংখ্যালঘুদের ওপর চালানো নির্যাতনের আরেকটি ভয়ানক কাহিনি। ওয়ার্ল্ড উইঘুর কংগ্রেসের প্রেসিডেন্ট রাবেয়া কাদির গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে অভিযোগ করেন যে, সাম্প্রতিক ঘটনা থেকে স্পষ্ট প্রতিয়মান হয় যে, রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় উইঘুর স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য মুছে ফেলার লক্ষ্যে যথাযথ আইনি প্রক্রিয়াকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে এই হত্যাকা- ঘটানো হয়েছে।

একইভাবে গত ২০১৩ সালের ১৫ ডিসেম্বর চীনা পুলিশ একই ভিত্তিহীন অভিযোগে ১৪ জন উইঘুর মুসলিমকে হত্যা করে। ২০১৩ সালের জুন মাসে ঝিনঝিয়াং অঞ্চলে এক রক্তক্ষয়ী দাঙ্গায় অন্তত ২৭ জন উইঘুর মুসলিম নিহত হন। পুলিশের সাথে এ সহিংসতার ঘটনা ঘটে। আঞ্চলিক রাজধানী উরুমকির ১২০ মাইল দক্ষিণপূর্বাঞ্চলীয় শহর লুককুনে ভোর ৬ টার দিকে এই দাঙ্গার সূত্রপাত হয়। উইঘুর মুসলমানদের অভিযোগের তীর স্থানীয় প্রশাসন এবং হান সম্প্রদায়ের দিকেই ।

এ বছরের ২২ মে ২০১৩ উইঘুর মুসলিম অধ্যুষিত ঝিনঝিয়াং প্রদেশের আঞ্চলিক রাজধানী উরুমকির একটি ব্যস্ততম মার্কেটে বোমা হামলায় ৩১ জন নিহত হয়েছে। এ হামলায় ৯০ জনেরও বেশি লোক আহত হয়। উইঘুর মুসলমান নিহত হলেও চীনা প্রশাসন তাদেরকে এই হামলার জন্য দায়ী করেছে। কিন্তু উইঘুর মুসলমানরা এটাকে তাদের দমন-নিপীড়নের অংশবিশেষ বলে মনে করে। এমনই মন্তব্য উঠে এসেছে বিবিসির প্রতিবেদনে।

শুধু হত্যা আর খুন নয়, বরং তাদের বুদ্ধিজীবীদের গ্রেফতার করে তাদেরকে মনস্তাত্ত্বিকভাবেও চাপে রাখা হয়। তারই ধারাবাহিকতায় এবছর অর্থাৎ ২০১৪ সালের ১৫ জানুয়ারি চীনের পুলিশ খ্যাতনামা উইঘুর মুসলিম

বুদ্ধিজীবী, বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ইলহাম তোহতি ও তার মাকে গ্রেফতার করে। পুলিশ তার বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে তার ব্যক্তিগত কম্পিউটার, মোবাইল ফোন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সম্পর্কিত কাজগ-পত্র আটক করে। ইলহাম তোহতি বেইজিং ইউনিভার্সিটির ইকোনমিক্সের একজন খ্যাতনামা অধ্যাপক। তার বিরুদ্ধে ‘গুরুতর’ অভিযোগ, তিনি উইঘুর মুসলমানদের পক্ষে কাজ করেন। তেমনিভাবে চীনা কতৃপক্ষের নির্যাতনে আহত তরুণ উইঘুর মুসলিম নারী আইনজীবী গুলনার আব্দুল্লাহ এ বছরের মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে মারা যান।

গত সপ্তাহে (২৭ মে) এক গণবিচারে ৫৫ জন উইঘুর মুসলমানকে দ-াদেশ দিয়েছে চীন সরকার। ঝিনঝিয়াং প্রদেশের ঈলি জেলার একটি স্টেডিয়ামে গত মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত এই গণবিচার প্রত্যক্ষ করে প্রায় সাত হাজার স্থানীয় জনতা ও কর্মকর্তারা। খুন, বিচ্ছিন্নতাবাদ ও সন্ত্রাসী সংগঠনের সাথে যুক্ত হওয়ার দায়ে তিনজনকে মৃত্যুদ- ও অন্যদের বিভিন্ন মেয়াদের সাজা দেয়া হয়েছে। একই অভিযোগে আরো ৬৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে ঘোষণা করে পুলিশ ।

গত ২০১৩ সালের ২২ আগস্ট কাশগড় প্রিফেকচারে কতৃপক্ষের ভাষায় ‘সন্ত্রাস বিরোধী অভিযানে’ দুই ডজন উইঘুর মুসলিমকে হত্যা করা হয়। ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বরের গোড়ার দিকে আকসু প্রিফেকচারের একটি থানার বাইরে পুলিশের গুলিতে নিহত হয় কমপক্ষে ৩ জন মুসলিম ও আহত হয় ২০ জন ।

ধর্মীয় স্বাধীনতায় নগ্ন হস্তক্ষেপ

উইঘুর মুসলমানরা নিজেদের আচার-অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে প্রতিনিয়ত বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন। যেমন, পবিত্র রমযান মাসে সরকারি কর্মচারীরা রোজা রাখতে পারবে না, কেউ যদি আইন লঙ্ঘন করে রোজা রাখে, তাকে রোজা ভাঙতে বাধ্য করা হয়। কলেজ ছাত্রদের অবশ্যই সাপ্তাহিক রাজনৈতিক শিক্ষাক্লাসে যোগ দিতে হবে এবং সশস্ত্র পুলিশ কর্মকর্তারা কতৃপক্ষের অনুমোদনবিহীন মাদরাসাগুলোতে যখন ইচ্ছা হানা দিতে পারবে। সবচেয়ে বেশি উসকানিমূলক পদক্ষেপ হচ্ছে, মহিলাদের হিজাব ব্যবহার করা ও পুরুষদের দাড়ি রাখার বিরুদ্ধে প্রচারাভিযান। যেসব ট্যাক্সিচালক বোরকা পরা মহিলাদের গাড়িতে নেবে, তাদের মোটা অংকের জরিমানা করা, মস্তকাবরণ সরাতে অনিচ্ছুক মহিলাদের চিকিৎসা সেবা দিতে ডাক্তারদের বারণ করা। বোরকা পরা মেয়েদের প্রশাসনকর্তৃক বিভিন্নভাবে হেনস্তা করা। সরকারের আরেকটি খারাপ নীতি হচ্ছে মহিলা এবং ১৮ বছরের নিচের কোনো ছেলে মসজিদে যেতে পারবে না। সম্মিলিতভাবে কুরআন-হাদিস অধ্যয়নে সরকারি নিষেধাজ্ঞা এবং ধর্মীয় স্থাপনাগুলো সার্বক্ষণিক থাকে তাদের গোয়েন্দা নজরদারিতে। নামাজ পড়ার কারণে চাকরি চলে গেছে, এরকম ভুরিভুরি নজির আছে ঝিনঝিয়াংয়ের উইঘুর জনপদে। চাকরির ক্ষেত্রেও উইঘুর মুসলমানরা চরম বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। যা সাম্প্রতিক সময়ে পরিচালিত একটি জরিপ থেকে বোঝা যায় ।

ধর্মীয় ক্ষেত্রে উইঘুর মুসলিমদের প্রতি চীন সরকারের নীতির কঠোর সমালোচনা করে মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলেছে, ২০০৯ সালের দাঙ্গার পর চীনা সরকারের সমালোচনা করে শান্তিপূর্ণভাবে মতামত প্রকাশের দায়ে চীন সরকার গোপনে বেশ কয়েকজন উইঘুর মুসলিম বুদ্ধিজীবীর বিচার করেছে। তারা আরো বলেছে, ধর্ম নিয়ন্ত্রণ এবং সংখ্যালঘুদের ভাষাশিক্ষা নিষিদ্ধ করার চীনা নীতি ঝিনঝিয়াংয়ে অস্থিতিশীলতার অন্যতম কারণ। মুসলমানরা অভিযোগ করছেন, তাদের স্বকীয়তা ও সংস্কৃতি মুছে ফেলার লক্ষ্যে তাদের নিজস্ব ভূভাগে সন্ত্রাসী হান সম্প্রদায়কে দিয়ে বসতি গড়ে তোলা হচ্ছে। ভূতত্ত্ববিদ আর সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, চীনা কর্তৃপক্ষের গৃহীত পদক্ষেপের ফলে ১৯৪০ দশকে ঝিনঝিয়াংয়ের ৫ শতাংশ হান সম্প্রদায় বর্তমানে ৪০ শতাংশে পরিণত হয়েছে এবং সেখানে নিয়মিত মুসলিমবিরোধী দাঙ্গা হয়ে আসছে।

স্বতন্ত্র আবাসভূমির স্বপ্ন

ঝিনঝিয়াংয়ের আয়তন গোটা চীনের আয়তনে এক-ষষ্ঠাংশ। খনিজ ও তেল সম্পদে এ প্রদেশটি বিপুলভাবে সমৃদ্ধ। এখানে তেলের মজুদের পরিমাণ প্রায় ২ হাজার ১শ কোটি টন। উইঘুর মুসলমানরা স্বতন্ত্র আবাসভূমির স্বপ্ন দীর্ঘদিন ধরে লালন করলেও এমন খনিজ ও তেল সম্পদে টইটম্বুর প্রদেশটি সহজে হাতছাড়া করবে চীন, এ ধরনের কল্পনা করাটাও যেন বোকার স্বর্গে বসবাস করার নামান্তর। বরং চীন চাইবে তাদেরকে যেভাবেই হোক চাপ প্রয়োগ করে অথবা অন্য যেকোনো পন্থায় হোক, নিজেদের বশীভূত রাখতে। যদিও তাতে হাজার-হাজার উইঘুর মুসলমানের লাশ পড়ে। নির্যাতিত উইঘুর মুসলমানদের ভবিতব্য কী হয়? সুখ নামক সোনার হরিণ কি ধরা দেবে তাদের হাতে, দুখের লোনা সাগরে হাবুডুবু খেতে হবে তাদের আরো বহুকাল? তা জানতে অপেক্ষা করা ছাড়া কোনো গত্যন্তর নেই।

রুশ ফেডারেশনভুক্ত ১৪টি মুসলিম প্রজাতন্ত্র

0 মন্তব্য(গুলি)

মুসলমানরা একসময় পৃথিবীর পরাশক্তি ছিল। কিন্তু পরে জ্ঞান-বিজ্ঞান, পরিকল্পনা, সমরাস্ত্র ও একতা ইত্যাদিতে তারা অমুসলিম বিশেষত খ্রিষ্টানদের চেয়ে অনেক দুর্বল হয়ে পড়ে। ফলে একসময় হিজায ছাড়া মুসলিম অধ্যুষিত অন্যসব অঞ্চল খ্রিষ্টবাদী ব্রিটিশ, ফ্রান্স, পর্তুগীজ, স্পেন, ইটালী ও রুশদের নিয়ন্ত্রণে চলে যায় এবং এ সময় তারা এসব অঞ্চলে মুসলমানদের উপর গণহত্যাসহ বিভিন্ন ধরণের নিপীড়মূলক ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি নাস্তিক্যবাদ ও ধর্মনিরপেক্ষতার বীজ বপন করে। দীর্ঘদিন পর তা থেকে অনেক এলাকা দেশ আকারে স্বাধীন হলেও অনেক এলাকা এখনো স্বেচ্ছায় বা বাধ্য হয়ে অমুসলিম দেশগুলোর নিয়ন্ত্রণে থেকে যায়। নীচে রুশ ফেডারেশনভুক্ত ১৪ মুসলিম প্রজাতন্ত্রের সংক্ষিপ্ত পরিচয় তুলে ধরা হলো। 

চেচনিয়া  
অবস্থান        ককেশাস অঞ্চল 
সীমান্ত        পূর্বদিকে দাগিস্তান, উত্তরে দাগিস্তান ও স্তাভুরোপুল, দক্ষিণে দাগিস্তান ও জর্জিয়া এবং পশ্চিমে উত্তর ওশেটিয়া। 
রাজধানী       গ্রোজনী 
আয়তন       ১৫৫০০ বর্গ কি: মি: 
জনসংখ্যা      ১,১০৩,৬৮৬ (২০০২) 
মুসলিম        ১০০% 
রাষ্ট্রভাষা       চেচেন, রুশ 
প্রেসিডেন্ট     রমজান কাদিরুভ 
প্রধানমন্ত্রী      . . . . . .

দাগিস্তান 
অবস্থান          ককেশাস অঞ্চল 
সীমান্ত         পূর্বদিকে কাম্পিয়ান সাগর, দক্ষিণে আজারবাইজান, দক্ষিণ-পশ্চিমে জর্জিয়া, পশ্চিমে চেচনিয়া এবং উত্তরে স্তাভুরোপুল অঞ্চল ও কালমিকিয়া প্রজাতন্ত্র। 
রাজধানী       মাহাজকিল্লা 
আয়তন       ৫০৩০০ বর্গ কি: মি: 
জনসংখ্যা      ২৫৭৬৫৩১ (২০০২) 
মুসলিম        ৯৫% 
রাষ্ট্রভাষা       রুশ 
প্রেসিডেন্ট     মুহাম্মদ সালাম মাহমুদুফ 
প্রধানমন্ত্রী      আতা বাশরুভিট আলীফ

ইঙ্গোশেটিয়া 
অবস্থান        ককেশাস অঞ্চল 
সীমান্ত         চেচনিয়া, উত্তর ওশেটিয়া ও জর্জিয়ার মাঝামাঝিতে অবস্থিত। 
রাজধানী       মাগাস 
আয়তন       ৪,০০০ বর্গ কি: মি: 
জনসংখ্যা      ৪৬৭,২৯৪ (২০০২) 
মুসলিম        ৯৯% 
রাষ্ট্রভাষা       ইঙ্গুশ, রুশ 
প্রেসিডেন্ট     মুরাদ মাহমুদুভেচ জিয়া জেকব 
প্রধানমন্ত্রী      তৈমুর আহমুদুভেচ মুগু জেকব

কার্বডিন বলগারিয়া 
অবস্থান        ককেশাস অঞ্চল 
সীমান্ত        পূর্বে উত্তর ওশেটিয়া, পশ্চিমে কারাচাই-সার্কিজিয়া, দক্ষিণে জর্জিয়া ও উত্তরে রাশিয়াভূক্ত অন্য প্রজাতন্ত্র। 
রাজধানী       নলচিক 
আয়তন       ১২৫০০ বর্গ কি: মি: 
জনসংখ্যা      ৯০১,৪৯৪ (২০০২) 
মুসলিম        ৭০% 
রাষ্ট্রভাষা       রুশ, আদিগিয়া, বলগারিয়া 
প্রেসিডেন্ট     আরসিন বাশিরুভিচ কানুকুভ 
প্রধানমন্ত্রী      জুনাদী জুবিন

আদিগিয়া 
অবস্থান        ককেশাস অঞ্চল 
সীমান্ত         ক্রাসনুডার অঞ্চল বেষ্টিত। দক্ষিণ-পূর্বদিক থেকে কৃঞ্চসাগর ও জর্জিয়া এবং পূর্ব দিকে কারাচাই-সার্কিজিয়ার নিকটবর্তী।  
রাজধানী       ম্যাকুব 
আয়তন       ৭৬০০ বর্গ কি: মি: 
জনসংখ্যা      ৪৪৭ ،০০০ (২০০২) 
মুসলিম        ৬৭% 
রাষ্ট্রভাষা       ইঙ্গুশ, রুশ 
প্রেসিডেন্ট     আছলান তাহাচুশিনা 
প্রধানমন্ত্রী      মুরাত কুম্বল

উত্তর ওশেটিয়া 
অবস্থান        ককেশাস অঞ্চল 
সীমান্ত        পূর্বে চেচনিয়া ও ইঙ্গুশেটিয়া, পশ্চিমে কার্বডিন বলগারিয়া, দক্ষিণে জর্জিয়া ও উত্তরে রাশিয়াভুক্ত অন্য প্রজাতন্ত্র। 
রাজধানী       ভালাদি ককাস 
আয়তন       ৮০০০ বর্গ কি: মি: 
জনসংখ্যা      ৭১০২৭৫ (২০০২) 
মুসলিম        ৫৫% 
রাষ্ট্রভাষা       ওশেটি, রুশ 
প্রেসিডেন্ট     তৈমুরাজ মনছুরুভ 
প্রধানমন্ত্রী      আলান বুরাজোভ

কারাচাই-সার্কিজিয়া 
Karachay-Cherkessia 
অবস্থান        ককেশাস অঞ্চল 
সীমান্ত         পশ্চিমে কার্বডিন বলগারিয়া, দক্ষিণে জর্জিয়া ও উত্তরে স্তাভুরোপুল। 
রাজধানী       চার্কেসক Cherkessk  
আয়তন       ৪,০০০ বর্গ কি: মি: 
জনসংখ্যা      ৪৬৭,২৯৪ (২০০২) 
মুসলিম        ৬২% 
রাষ্ট্রভাষা       আদিগিয়া, রুশ 
প্রেসিডেন্ট     মুস্তফা আলীভীচ বাতদীভ 
প্রধানমন্ত্রী      ভিরা মিকাইলুভানা মল্ডুভানুভা

বাশকুরুতুস্তান/বাশকেরিয়া 
অবস্থান        ভলগা অঞ্চল 
সীমান্ত   পশ্চিমে তাতারিস্তান, দক্ষিণে ওরাম্বার্গ, উত্তর ও পূর্বে সাইবেরিয়া। বাশকুরুতুস্তান রুশ ফেডারেশনের এশিয়া ও ইউরোপের সীমান্তে অবস্থিত।    
রাজধানী       ঊভা 
আয়তন       ১৭০৫০০  বর্গ কি: মি: 
জনসংখ্যা      ৩০৫৫১০ (২০০২) 
মুসলিম        ৬১% 
রাষ্ট্রভাষা       বাশকেরি, রুশ 
প্রেসিডেন্ট     রুস্তম হামিটতুভ 
প্রধানমন্ত্রী      . . ,

তাতারিস্তান 
অবস্থান        ভলগা অঞ্চল 
সীমান্ত        পশ্চিমে শোভাচিয়া ও অন্যান্যদিকে রাশিয়াভুক্ত অন্য প্রজাতন্ত্র। তাতারিস্তান এশিয়া থেকে ইউরোপকে বিভক্তকারী ওরাল পর্বতমালার পশ্চিম পাদদেশে অবস্থিত। 
রাজধানী       কাজান 
আয়তন       ৬৭৮৩৬২ বর্গ কি: মি: 
জনসংখ্যা      ৩৭৭৯২৬৫ (২০০২) 
মুসলিম        ৬২% 
রাষ্ট্রভাষা       তাতারি, রুশ 
প্রেসিডেন্ট     মিন্টিমার শায়েমীভ 
প্রধানমন্ত্রী      রুস্তম মনী খানুভ

শোভাচিয়া 
অবস্থান        ভলগা অঞ্চল 
সীমান্ত         পূর্বে তাতারিস্তান, উত্তরে মারিয়েল, দক্ষিণে মর্ডোভিয়া, পশ্চিমে রাশিয়াভুক্ত অন্য প্রজাতন্ত্র। 
রাজধানী       চেবুকসার 
আয়তন       ১৮৩০০  বর্গ কি: মি: 
জনসংখ্যা      ১৩১৩৭৫৪ (২০০২) 
মুসলিম        ৬০% 
রাষ্ট্রভাষা       চোভাস, রুশ 
প্রেসিডেন্ট     নিকুলা ভেচিলিভিস ফিদিরুভ 
প্রধানমন্ত্রী      সিরজী গাবলিুকুভ

মর্ডোভিয়া 
অবস্থান        ভলগা অঞ্চল 
সীমান্ত         উত্তরে শোভিাচিয়া ও অন্যান্যদিকে রাশিয়াভুক্ত অন্য প্রজাতন্ত্র। 
রাজধানী       সারান্সাক 
আয়তন       ২৬২০০ বর্গ কি: মি: 
জনসংখ্যা      ৮৮৮৭৬৬ (২০০২) 
মুসলিম        ৫৬% 
রাষ্ট্রভাষা       মর্ডোভি, রুশ 
প্রেসিডেন্ট     নিকুলা মীর কুশকীন 
প্রধানমন্ত্রী      এন্ডোভ বারান বুর্টোভ

ওডমোর্টিয়া 
অবস্থান        ভলগা অঞ্চল 
সীমান্ত        দক্ষিণে তাতারিস্তান ও অন্যান্যদিকে রাশিয়াভুক্ত অন্য প্রজাতন্ত্র।        
রাজধানী       ইগেভসিক 
আয়তন       ১৭০৫০০ বর্গ কি: মি: 
জনসংখ্যা      ৩০৫৫১০ (২০০২) 
মুসলিম        ৬৩% 
রাষ্ট্রভাষা       আডমুর্টি, রুশ 
প্রেসিডেন্ট     আলেকজান্ডার ভুলকুভ 
প্রধানমন্ত্রী      বুল বেলাকুভ

মারিয়েল 
অবস্থান        ভলগা অঞ্চল 
সীমান্ত        উত্তরে তাতারিস্তান ও শোভাচিয়া এবং  অন্যান্যদিকে রাশিয়াভুক্ত অন্য প্রজাতন্ত্র। 
রাজধানী       ইউশকার ওলা 
আয়তন       ২৩২০০ বর্গ কি: মি: 
জনসংখ্যা      ৭১৩০০০ (১৯৮২) 
মুসলিম        ৬৪% 
রাষ্ট্রভাষা       মারিয়া, রুশ 
প্রেসিডেন্ট     ভেচিলাভ কোলোর্স 
প্রধানমন্ত্রী      বিটার পুলাস

ওরাম্বার্গ-উপলাস্ট  
অবস্থান        ভলগা অঞ্চল 
সীমান্ত         দক্ষিণে বাশকেরিয়া ও অন্যান্যদিকে রাশিয়াভুক্ত অন্য প্রজাতন্ত্র।   
রাজধানী       শাকালুভ 
আয়তন       ১২৪০০০ বর্গ কি: মি: 
জনসংখ্যা      বিশ লক্ষাধিক 
মুসলিম        ৫৪% 
রাষ্ট্রভাষা       ইঙ্গুশ, রুশ

 

এপ্রিল ২০১৩

উইকিপিডিয়া (অ্যারাবিক ভার্সন)