Translate

জাপানি নও-মুসলিম নারী অতসুকুু

Friday, December 1, 2017

0 মন্তব্য(গুলি)
ইসলামই বিশ্বের মহৎ ধর্ম, বললেন জাপানি নও-মুসলিম নারী অতসুকুু
২০০১ সালের ১১ ই সেপ্টেম্বরের রহস্যময় হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিশ্বের বহু প্রচারমাধ্যম ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে ব্যাপক নেতিবাচক প্রচারণা শুরু করে তখন ইসলাম ধর্মের প্রকৃত চিত্র সম্পর্কে জানতে আগ্রহী হয়ে ওঠেন জাপানি যুবতী ‘অতসুকু হুশিনু’। ইসলাম সম্পর্কে ব্যাপক গবেষণা ও জানা-শোনার পর অবশেষে তিনি এই ধর্মের সুশীতল ছায়াতলে আশ্রয় গ্রহণ করেন।
‘অতসুকু হুশিনু’ ইন্টারনেটে অনুসন্ধান চালিয়ে সংগ্রহ করেন পবিত্র কুরআন। পবিত্র কুরআনের পরিপূর্ণতা ও সার্বজনীনতা অভিভূত করে অতসুকু হুশিনু-কে। আর এ জন্যই তিনি ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে সবার থেকে দূরে থেকে ইন্টারনেট থেকে পবিত্র কুরআন পড়তেন তিনি যাতে এ মহাগ্রন্থের বাণীগুলো ভালোভাবে বুঝতে পারেন।
অতসুকু অত্যন্ত কোমল ও দয়ান্দ্র মনের মানুষ। তিনি পড়াশুনা করেছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ে। বর্তমানে অতসুকু ইরানে রয়েছেন এবং তিনি ইসলাম ও বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর পবিত্র আহলে বাইত সম্পর্কে ব্যাপক ধারণা অর্জনের চেষ্টা করছেন।
ইসলামের প্রতি ঈমান আনার ঘটনা তুলে ধরতে গিয়ে জাপানি যুবতী অতসুকু জানিয়েছেন, ১১ ই সেপ্টেম্বরের হামলার দৃশ্য বার বার দেখার পর প্রথম দিকে তিনি গভীরভাবে মর্মাহত হন। এরপর তার কাছে মনে হয়েছে এই ঘটনার সঙ্গে হলিউডের ছায়াছবিগুলোর বেশ মিল রয়েছে এবং ঘটনাটি এমন রহস্যময় যে এর পেছনে বা নেপথ্যে অনেক চালিকাশক্তি কাজ করছে। এই ঘটনার সঙ্গে ইসলাম ও মুসলমানদের জড়িয়ে অনেক নেতিবাচক কথা প্রচার করা হয়। আর সেইসব প্রচারণায় প্রভাবিত না হয়ে  বরং এ ধর্ম সম্পর্কে সত্যিকারের চিত্র জানতে আগ্রহী হন অতসুকু। এরপর অনুসন্ধান চালিয়ে দেখতে পান যে ইসলামই হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে মহৎ ও বড় ধর্ম।
ইসলাম ধর্ম গ্রহণের প্রেক্ষাপট প্রসঙ্গে অতসুকুু বলেছেন: আমি বড় হয়েছি এক বৌদ্ধ পরিবারে। বৌদ্ধরা নিজ ধর্ম বিষয়ে খুবই রক্ষণশীল। আমার এক চাচা জাপানি সংসদে বৌদ্ধ ধর্মের প্রতিনিধি ছিলেন। তাই এ ধর্ম সম্পর্কে আমার গভীর জানাশোনা ছিল। আমার আরেক চাচা ছিলেন পুরোহিত। তিনি খ্রিস্টানদের বাইবেলও পড়েছেন। ফলে খ্রিস্ট ধর্মের সঙ্গেও আমি পুরোপুরি পরিচিত ছিলাম। আমার মনে কোনো কোনো বিষয়ে কিছু প্রশ্ন জাগতো, কিন্তু কেউই সেইসব প্রশ্নের জবাব দিতে সক্ষম হননি। কিন্তু ইসলামের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার পর আমার জীবনের রঙ ও ঘ্রাণ বদলে যায়। মুসলমানদের ধর্মগ্রন্থ পবিত্র কুরআন প্রথমবারের মত পড়েই মনে হয়েছে যে, সত্যিই তা আসমানি বা ঐশী কিতাব এবং অন্য ধর্মগ্রন্থগুলোর সঙ্গে এর রয়েছে আকাশ-পাতাল পার্থক্য। তাই বুঝলাম যে ইসলামই প্রকৃত আল্লাহপ্রদত্ত ধর্ম। পবিত্র কুরআন আমার মনের অনেক প্রশ্নের উত্তর দিয়েছে এবং দূর করেছে দ্বিধা-দ্বন্দ্ব। ফলে ইসলামের দিকে আরো গভীরভাবে ঝুঁকে পড়ি এবং ইসলাম ধর্ম গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেই।
নিজের ওপর পবিত্র কুরআনের অমূল্য ও অতুলনীয় বাণীর প্রভাব প্রসঙ্গে জাপানি নওমুসলিম অতসুকুু বলেছেন: আমি যা কিছু পেয়েছি তা এই কুরআন থেকেই পেয়েছি। কুরআনই আমাকে চিনিয়েছে ধর্মের বাস্তবতা ও এর ফলে আমি মুসলমান হয়েছি। এ মহাগ্রন্থ আমাকে দিয়েছে প্রশান্তি এবং কুরআনের নির্দেশনা পেয়েই আমি কঠোর পরিস্থিতিতেও ধৈর্য ধরেছি ও হিজরত করেছি নিজ দেশ থেকে এমন এক দেশে যে দেশ আর তার জনগণ সম্পর্কে আমার কোনো ধারণাই ছিল না। এই দেশে আমি ছিলাম আগন্তুক বা প্রবাসী; কিন্তু কুরআনের কারণেই আমি এখানে নিঃসঙ্গতা অনুভব করিনি। কুরআন সব সময়ই আমার জন্য আলো ও মুক্তির উৎস। এ মহাগ্রন্থ আমাকে ভয় ও নিঃসঙ্গতার শিকার হতে দেয়নি। যে কেউ কুরআন পড়লে অবশ্যই সুপথ বা মুক্তির দিশা পাবেন। আমি আমার সমগ্র অস্তিত্বের মধ্যে এই মহাসত্যটি অনুভব করছি।
জাপানি নওমুসলিম অতসুকু মহানবী (সা.)র পবিত্র আহলে বাইতের সদস্য নবী-নন্দিনী হযরত ফাতিমা জাহরা সালামুল্লাহি আলাইহাকে গভীরভাবে ভালবাসেন। আর তাই মুসলমান হওয়ার পর নিজের নাম হিসেবেও বেছে নিয়েছেন জ্যোতির্ময় ও পবিত্র এই নাম। তিনি হযরত ফাতিমা (রা.)’র জীবনী ও বাণী অধ্যয়ন করে নিজেকে তাঁরই আদর্শের অনুসারী হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করছেন।
অতসুকু তার স্বামীর সঙ্গে বিবাহ-বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার আগে ইন্টারনেটে হযরত ফাতিমা (রা.)-এর জীবনী সম্পর্কে জেনেছেন। বিশ্বের সর্বকালের সেরা এই নারীর জীবনাদর্শ তাকে এতটা অভিভূত করেছে যে তিনি নিজেকে তাঁরই অনুসারী হিসেবে গড়ে তুলতে আগ্রহী হন। এই মহিয়সী নারী হযরত আলী (রা.)-এর সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন অতি সামান্য মোহরানা নিয়ে, আর কনের জন্য নির্ধারিত সেই  পুরস্কার বা মোহরানাও সংগ্রহ করা হয়েছিল আলী (রা.)-এর বর্ম বিক্রি করার মাধ্যমে। -এ ঘটনাও জাপানি নওমুসলিম অতসুকুকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছে। ফলে তিনিও নিজের জন্য একই ধরনের পরিস্থিতি কামনা করেছেন মহান আল্লাহর কাছে যাতে নবী-নন্দিনীর মতই আচরণ করতে পারেন।
এরপর অতসুকু বিয়ের মোহরানা হিসেবে স্বামীর কাছে কেবল একটি স্বর্ণমুদ্রা দাবি করেন এবং তা দিয়েই নতুন সংসারের জন্য প্রয়োজনীয় বা জরুরি জিনিসগুলো কেনেন। এত কম পরিমাণ মোহরানা নেয়ার জন্য তিনি মোটেই অনুশোচনা করছেন না, বরং দাম্পত্য জীবন শুরু করার ক্ষেত্রে হযরত হাসান ও হুসাইনের মাতা ও আলী (রা.)-এর স্ত্রী হযরত ফাতিমা জাহরা (রা.)-এর আদর্শ অনুসরণ করতে পেরে গভীর আধ্যাত্মিক তৃপ্তি অনুভব করছেন। তার মতে মাত্র এই একটি স্বর্ণমুদ্রা তার জীবনে এনেছে অনেক বরকত বা প্রাচুর্য। আর এ জন্য তথা ফাতিমা জাহরা (রা.)-এর আদর্শ অনুসরণের সুবাদে এতো বরকত পেয়ে অতসুকু মহান আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞ।
অতসুকুর পরিবার তার মুসলমান হওয়ার প্রবল বিরোধিতা করেছিল। বিষয়টা তাদের কাছে ছিল বিনা মেঘে বজ্রপাতের মত। প্রথমে তারা বিষয়টিকে বিশ্বাসই করেননি। পরে দেখলেন যে তাদের মেয়ে নিজেকে অনেক কিছু থেকেই দূরে রাখছে, বিশেষ করে তারা যখন দেখলেন যে অতসুকু হারাম গোশত খাচ্ছেন না তখন তারা বিরোধিতা জোরদার করেন।
এবার তারা অতসুকুর ওপর অর্থনৈতিক ও মানসিক চাপসহ নানা ধরনের চাপ দিতে থাকে ও তাকে হয়রানি করতে থাকে যাতে সে ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করে। অতসুকুর সমস্ত বন্ধু ও ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিরাই তাকে ত্যাগ করেন। ফলে পরিবার ও নিজ শহরে নিঃসঙ্গ ও কোণঠাসা হন অতসুকু। অত্যন্ত কঠিন সেই দিনগুলোতে ইন্টারনেটে পবিত্র কুরআনই ছিল তার একমাত্র সঙ্গী যে তাকে যোগাতো প্রশান্তি ও সহায়তা। কুরআনের সহায়তার কারণেই তিনি সে সময় নিজ ঈমানের ওপর অবিচল থাকতে পেরেছেন। নানা ধরনের চাপ অতসুকুর ঈমানকে বরং আরো মজবুত করে দেয়। ফলে চাপ ও হয়রানি বাড়তেই থাকে। কিন্তু প্রশান্ত হৃদয়ে সব সহ্য করে যান তিনি। এ সময় অতসুকু পবিত্র কুরআনের নির্দেশনা অনুযায়ী কেবল আল্লাহর ওপরই ভরসা করতেন ও আশার আলো দেখতেন।
অতসুকু হুশিনু থেকে ফাতিমা হুশিনুতে পরিণত হওয়া জাপানি নারী ইসলাম সম্পর্কে ভালোভাবে জানার জন্য ইরানে আসেন। কোনো একটি ইসলামী দেশে জীবন যাপন করা ছিল হুশিনুর বহু বছরের স্বপ্ন। তার সেই স্বপ্ন পূরণ হওয়ার ফলে একটি অমুসলিম দেশে মুসলমানিত্ব বজায় রাখার কঠোরতা থেকে মুক্তি পান তিনি।  ইরানিদের দয়া ও অতিথিপরায়নতাও মুগ্ধ করেছে জাপানি এই নওমুসলিমকে।

একজন ইহুদি নারী

0 মন্তব্য(গুলি)
সান্দ্র থেকে সালমা
তিনি একজন ইহুদি নারী। জীবনের নানা বাধা-বিঘ্নতায় ছিলেন কিছুটা ক্লান্ত। শান্তির সন্ধানে ছুটেছেন দেশ-দেশান্তরে। অবশেষে আজানের মধুর ধ্বনি তার মনে আনে পরিপূর্ণ শান্তি। খুঁজে পান ইসলামের পরশ। না, তাকে ইসলাম গ্রহণে কেউ বাধ্য করেনি। হিজাব পরতেও তাকে বাধ্য করা হয়নি। তিনি নিজেই এটি বেছে নিয়েছেন। তিনি হলেন সান্দ্রা নাউয়ি। ইসলাম গ্রহণ করেছেন তিনি।
সান্দ্রার মুখেই শুনুনু ইসলামের পথে তার যাত্রার হৃদয়গ্রাহী বর্ণনা:
আমার জীবনে সবসময়ই কিছু একটার অভাব অনুভব করতাম। আমি ধর্মের অর্থ খুঁজতে সচেষ্ট হই-কিন্তু সব ভুল জায়গায় এবং সব ভুল উপায়ে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষে ইউরোপ অনেকটাই ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। যুদ্ধের সময় আমার পরিবার লুকিয়ে ছিল। আমার পিতামহকে বন্দী করার পর তাকে ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়। এই সময় আমার মা তার পিতাকে হারায়।
১৯৫৭ সালে আমার বাবা-মা জার্মানির ম্যানহেইম থেকে কানাডায় চলে যায়। আমার বাব-মা ইহুদি এবং ইহুদি পরিবারেই আমার জন্ম। যুদ্ধের পর আমার বাবা-মা উভয় বেশ তিক্ত ছিল এবং অনেকটা বাধ্য হয়েই নতুন দেশে একটি নতুন জীবন শুরু করতে চেষ্টা করে।
তারা কানাডায় কানাডিয়ানদের মত হতে কঠোর চেষ্টা করে। তারা সেখানে তাদের নাম পরিবর্তন করে এবং তাদের ঐতিহ্যকে অনেকটা দূরে সরিয়ে রাখে।
আমি আমার বাবা-মা থেকে ভিন্ন ছিলাম। আমি আমার ইহুদি বিশ্বাসকেই গ্রহণ করি কিন্তু আমি তখনও কিছু একটার সন্ধানে ছিলাম। আমি জানি না সেটা কি।
যখন আমার অনুসন্ধান শেষ, সান্দ্রা তখন আর নেই। সান্দ্রার স্থান দখল করে হয় সালমা। ইহুদি ধর্ম থেকে ইসলাম গ্রহণ করার সময় আমি সালমা নামটি বেছে নেই। কেননা সালমা (উম্মে সালমা) ছিলেন মহানবীর (সা.) স্ত্রীদের একজন।
তিনি ছিলেন এমন একজন নারী যিনি সবাইকে দেখাশোনা করতেন এবং এটি আমার নিজের নামের সাথে বেশ ঘনিষ্ঠ। কেননা আমি আমার সান্দ্রা নামের অর্থ অনুসন্ধান করে জেনেছি, সান্দ্রা মানে মানবজাতির সাহায্যকারী।
ইসলামে প্রথম পরিচয় :
সম্ভবত আমার যখন ১৩ বছর বয়স, তখন ক্যাট স্টিভেন্স নামে এক লোকের কথা জানতে পারি যিনি ইসলামে ধর্মান্তরিত হয়েছিল এবং যিনি এখন ইউসুফ ইসলাম নামে পরিচিত। আমাকে তার এই বিষয়টি মুগ্ধ করে এবং তখন থেকেই ইসলাম সম্পর্কে জানতে চেষ্টা করি।
আমার টিনেজার বয়সটি ছিল আমার জন্য বেশ চ্যালেঞ্জিং। আমি বিদ্রোহী টাইপের ছিলাম না। আমি কেবলই অসন্তুষ্ট ছিলাম। আমি বাড়িতে কিছুতেই স্বস্তি পাচ্ছিলাম না। এই কারণে আমি ১৭ বছর বয়সে বাড়ি ত্যাগ করি।
২০০১ সালে আমি এক মাতাল ড্রাইভারের আঘাতের শিকার হই। তার আঘাতের কারণে আমাকে পুনরায় হাটতে শিখতে হয়। এই মাতাল ড্রাইভার আমার গাড়িতে আঘাত হানে। তার আঘাতে আমার গাড়ি বাতাসের সাথে উড়তে থাকে। আমি আমার জীবনের আশা ছেড়েই দিয়েছিলাম। আমার কাছে কেবলই মনে হয়েছিল, আমি নিশ্চিত মারা যাচ্ছি।
দুর্ঘটনাটি এমন একসময়ে ঘটে যখন আমি আমার জীবন নিয়ে অনেকটা দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগছি। আমি সত্যিই জানতাম না আমি আসলে আমার বাকি জীবনে কি করতে চাচ্ছি।
আমার জীবনের সবচেয়ে বড় টার্নিং পয়েন্ট হচ্ছে আমার মায়ের ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়া এবং ২০০৫ সালে তার মৃত্যু এবং এই সমস্ত ঘটনা আমাকে ইসলামের প্রতি ধাবিত করে।
আজানের মধু ধ্বনি:
২০০৫ সালে আমি ভারত যাই। এটি ছিল আমার মায়ের মৃত্যুর দুই সপ্তাহ পর। আমি যখন সেখানে যাই তখন ছিল রমযান মাস। সেখানে প্রথম রাতে আমি ঘুমোতে যাই। ভোর ৫ টায় আযানের শব্দে আমার ঘুম ভেঙ্গে যায়।
আযানের শব্দের বিশাল শক্তি আমাকে মুগ্ধ করে। আমি আসলে কিছুটা আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ি। আমি জানালার কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকি। দূর থেকে ভেসে আসা এই আজান আমার মনে পরিপূর্ণ সুখ, শান্তি ও একাত্মতার অনুভূতি সৃষ্টি করে। আমি আনন্দে কেঁদে ফেলি। আমার এই কান্না ছিল বিশ্বাসের কান্না।
কালেমা পাঠ:
আমি কালেমা শাহাদাহ পাঠ করতে এক ইমামের দ্বারস্থ হই। তার নিকট গেলে তিনি আমাকে এই সর্ম্পকে ধারণা দেন।
তিনি আমাকে বলেন, ‘কালেমা শাহাদাহ হচ্ছে ইসলামের একটি ঘোষণা। এটি কেবলমাত্র একটি স্বীকৃতি। এটি হল তাই যা আপনি বিশ্বাস করেন। আপনি ইসলামের প্রতি আপনার বিশ্বাস ঘোষণা করেছেন এবং আপনাকে নিম্নলিখিত দুটি বাক্য বলতে হবে যা সাক্ষ্য হিসেবে বহন করবে। আর তা হল, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া আর কোনো উপাস্য নেই এবং আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, হযরত মুহাম্মদ (সা.) তার রাসূল।’
বিন্দুমাত্র বিলম্ব না করে আমরা এটি করতে অগ্রসর হলাম এবং সর্বশক্তিমান আল্লাহ নিকট তার আশীর্বাদ চাইলাম এবং ঐ আনন্দের মুহূর্তে আমরা সবাই সাক্ষী হলাম।
আমি ইমামের সাথে সাথে বললাম, তিনি আমাকে এর অর্থ করে শুনালেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া আর কোনো উপাস্য নেই এবং আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, হযরত মুহাম্মদ (সা.) তার রাসূল। আমার শাহাদাহ পাঠের পর তিনি আমাকে অভিনন্দন জানান। তিনি বললেন, ‘জাযাকাল্লাহ খায়রান। আল্লাহ আকবর, আলহামদুলিল্লাহ।’
আমার ইসলাম গ্রহণের এই কথা আমার পরিবার এবং বন্ধুদের মাঝে বলাটা একটু কষ্টকর ব্যাপারই ছিল। আমি বলতে চাচ্ছি, এটি বলার আমার কোনো উপায় ছিল না যে, আমি ইহুদিধর্ম ত্যাগ করে মুসলিম হয়ে গেছি।
হিজাব পরিধান:
আমি প্রথম যখন হিজাব পরতে শুরু করি, প্রথম চার সপ্তাহ ভয়ঙ্কর স্নায়ুবিক দুর্বলতায় ভুগতাম। আমার কথা এবং চিন্তা সম্পর্কে অন্যদের প্রতিক্রিয়া কি হবে এটি ভেবেই স্নায়ুবিক অস্বস্তিতে ভুগতাম। কিন্তু প্রথম এই চার সপ্তাহ পরেই স্বস্তিবোধ করি।
হিজাবের প্রতি মানুষের প্রতিক্রিয়ায় আমি ক্রমাগত বিস্মিত হয়েছি। সমস্যাটি হল উত্তর আমেরিকার মানুষেরা হিজাব পরিহিত নারীকে নিপীড়িত এবং পরাধীন হিসেবে মনে করেন। হয়তো কিছু দেশে কিংবা কিছু শাসন ব্যবস্থায় এটি সত্য হতে পারে কিন্তু কানাডার জন্য নয়। এখানে আমাদের পছন্দের স্বাধীনতা রয়েছে এবং আমি এটিই বেছে নিয়েছি।
আমি মনে করি, তারা যাই মনে করুক না কেন নারীদের শরীর ঢেকে রাখতে হিজাব পরিধান করা অতি জরুরি। পবিত্র কুরআনেও তাই বলা হয়েছে। হিজাব পরে আমি সত্যিই স্বস্তি অনুভব করি। আমি আনন্দিত এটি পরে। এখন তো হিজাব ছাড়া বাইরে জনম্মুখে যাওয়ার কথা কল্পনাও করতে পারি না।
প্রথমবারের মত আমি যখন হিজাব পরে আমার কর্মস্থলে যাই, তখন আমি সামান্য নার্ভাস ছিলাম। আমি শহরের কেন্দ্রস্থলে একটি লিগ্যাল ফার্মে আইনি সহকারী হিসাবে কাজ করছি, সুতরাং পোশাকের ব্যাপারে সামান্য রক্ষণশীলতার বিষয় রয়েছে।
আমি আমার সহকর্মীদের কাছ থেকে যে অভ্যর্থনা পেয়েছি তা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ছিল মধুর। তবে কেউ কেউ মুখে ভেংচি কাটত, কেউ আবার কৌতুকপূর্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকত এবং আমার অনেক সহকর্মী আমার ডেস্কের পাশ দিয়ে যেতে সঙ্কোচবোধ করত।
দুঃখের বিষয় হল, আমার সবচেয়ে খারাপ এক অভিজ্ঞতা হয়েছে যা আমি মুসলিম সম্প্রদায় থেকে পেয়েছি। এক শুক্রবার আমি জুমার নামাজের জন্য বের হই। পথিমধ্যে আমার ফোন বেজে ওঠে এবং এটি ছিল একজন মুসলিম মহিলার ফোন।
তিনি আমাকে বলেন, ‘আপনি এখনও হিজাব পরেন?’ আমি তাকে উত্তরে বললাম ‘হ্যাঁ’।
এবং তিনি আমাকে বললেন, ‘ও আচ্ছা, আমার সব বন্ধুরা তো হতবাক কেমন করে এক শ্বেতাঙ্গ মেয়ে মুসলিম হওয়ার ভান করছে।’
তাদের এই ধরনের মন্তব্য আমার হৃদয়ে আঘাত করে। এই কারণে যে আমি কোনো ভান করছি না।
আমি উত্তর আমেরিকান হওয়ার কারণে লোকজন সবসময় এমনটি মনে করে থাকে এবং তারা মনে করে, আমি ইসলামে ধর্মান্তরিত হয়ে রাজনৈতিক বিবৃতি সৃষ্টি করছি। কিন্তু আমি মনে করি বিবৃতি সৃষ্টি করার চেয়েও বড় কথা হল আমি কে। আমি একজন মুসলিম এবং আমি হিজাব পরিধানকেই বেছে নিয়েছি। এখানে একটি মিথ প্রচলিত আছে আর তা হল লোকজন নিশ্চিত ধরে নেয় যে, উত্তর আমেরিকান মহিলাদের মধ্যে যারা ইসলামে ধর্মান্তরিত হয়েছে, তারা সবাই বিবাহিত, তিনি অবশ্যই এটি করেছেন তার স্বামীর জন্যই। যথেষ্ট বিস্ময়কর, কিন্তু আসলে তা নয়।
আমি একজন মুসলিম নারী। আমি আমার সঙ্গীর সাথে সাক্ষাৎ হওয়ার অনেক পূর্ব থেকেই হিজাব পরছি। আমার স্বামী শেখ জামাল জাহাবি ১৯৮০ সালে লেবানন থেকে কানাডায় আসেন। তিনি একটি ইসলামী কেন্দ্রের একজন ইমাম। আমি তার সর্ম্পকে জানতাম। কিন্তু আমাদের পারস্পরিক বন্ধুত্বপূর্ণ সর্ম্পক তখনও পর্যন্ত ছিল না যতক্ষণ পর্যন্ত না আমরা জানতে পারি আমরা কতটা অভিন্ন।
আমার বাবার সঙ্গে এখনও পর্যন্ত হিজাব পরা অবস্থায় আমার দেখা হয়নি এবং এখনও পর্যন্ত আমার স্বামীর সঙ্গে তার সাক্ষাৎ হয়নি। আমরা একটি পরিবার হিসাবে বাবার কাছে যাচ্ছি। যদিও আমি কিছুটা নার্ভাস অনুভব করছি। আমার বাবা কি বলবে সেসর্ম্পকে আমি ঠিক নিশ্চিত নই এবং তিনি কিভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাবে সে সর্ম্পকেও আমি নিশ্চিত নই।