ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিভাষা তাওবা। তাওবা মানুষের ¯্রষ্টা,
বিশ^জগতের প্রতিপালক আল্লাহ সুবহানাহুওয়াতায়ালার পক্ষ থেকে তাঁরই শ্রেষ্ঠতম
সৃষ্টি ও প্রতিনিধি মানুষের জন্য অফুরন্ত এক নেয়ামত, করুণা ও ভালোবাসা।
পাপ ও শাপমোচনের, মুক্তির অনন্য সুযোগের নাম তাওবা। মুসলিম সমাজে তাওবা
ব্যাপক পরিচিত বিষয় হলেও তাওবা কেন অপরিহার্য, কী এর গুরুত্ব ও কিভাবে
তাওবা করতে হয় সে সম্পর্কে সবার স্পষ্ট ও সঠিক ধারণা নেই। তাওবা শব্দের
আক্ষরিক অর্থ ফিরে আসা, প্রত্যাবর্তন করা।
পারিভাষিক অর্থে তাওবা হলো ইসলাম নিষিদ্ধ কাজ ত্যাগ করে ইসলাম নির্দেশিত কাজ করার মাধ্যমে আল্লাহর পথে ফিরে আসা ও আল্লাহর বিধানের ওপর অটল এবং অবিচল থাকা। মুসলিম ও অমুসলিম সবাইকে ইসলাম তাওবা করার আদেশ দিয়েছেন ও আহ্বান করেছেন। আল্লাহ সুবহানাহু বলেন, ‘হে মুমিনগণ! তোমরা সকলেই আল্লাহর কাছে তাওবা করো; যাতে তোমরা সফল হতে পারো।’ (সূরা আননূর,আয়াত-৩১)। আল্লাহতায়ালা আরো বলেন, ‘হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহর নিকট তাওবা করো খাঁটি তাওবা।’ (সূরা আততাহরিম, আয়াত-০৮)। মুহাম্মাদ সা: বলেন, ‘ইয়া আইয়্যুহান নাসু তুবু ইলাল্লাহি’ অর্থাৎ হে মানব সব! তোমরা আল্লাহর নিকট তাওবা করো- আল্লাহর নিকট ফিরে আসো, প্রত্যাবর্তন করো। (সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ৭০৩৪)।
সুতরাং মুসলিম-অমুসলিম সবাইকে আল্লাহর বিধানের দিকে ফিরে আসতে হবে অর্থাৎ তাওবা করতে হবে, তাহলেই কেবল আমরা সফল হতে পারব। শরিয়াহ বিশেষজ্ঞ আলেমরা সর্বসম্মতিক্রমে বলেছেন, সর্বদা তাওবা করা প্রত্যেক মুসলিমের জন্য ওয়াজিব। ইমাম কুরতুবি র: ও ইমাম নববী র: এই ইজমার কথা তাঁদের কিতাবে উল্লেখ করেছেন। তাওবা আল্লাহর জান্নাত প্রাপ্তি, জাহান্নাম থেকে মুক্তি, ক্ষমা ও ভালোবাসা পাওয়ার একটি বিরাট সুযোগ ও উপায়। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ বেশি বেশি তাওবাকারীকে ভালোবাসেন।’ (সূরা বাকারা, আয়াত-২২২)।
আল্লাহর ভালোবাসা পেতে চায় না কে! সেই ভালোবাসার পাথেয় হলো তাওবা। আর এ তাওবা হতে হবে শুধু আল্লাহর জন্য। আমরা জানি, কর্মের ফলাফল নির্ভর করে নিয়তের ওপর। সুতরাং তাওবা আল্লাহর জন্য হলে আমরা তাওবার কাক্সিক্ষত ফজিলত লাভ করতে পারব। তাওবা কিভাবে করতে হয়? মহান আল্লাহর হক বা অধিকার সম্পর্কিত হলে তিনটি শর্ত বাস্তবায়ন করলেই তাওবা হয়ে যাবে। শর্ত তিনটি হলো- এক. পাপ পুরোপুরিভাবে ছেড়ে দিতে হবে। দুই. পাপের জন্য অনুশোচনা করতে হবে, লজ্জিত ও অনুতপ্ত হতে হবে। তিন. ওই পাপ দ্বিতীয়বার না করার সিদ্ধান্ত নিতে হবে, দৃঢ় সঙ্কল্প করতে হবে ও এরই ওপর অটল ও অবিচল থাকতে হবে। আর মানুষের হক বা অধিকারের সাথে সংশ্লিষ্ট হলে এর সাথে আরো একটি শর্ত যুক্ত হবে আর তা হলো সেই ব্যক্তি মানুষের কাছে মাফ চেয়ে নিতে হবে অথবা তার পাওনা-প্রাপ্তি, হক ফিরিয়ে দিতে হবে।
এ শর্তগুলো পূরণ করলেই তাওবা সহিহ হবে অন্যথায় তাওবা বিশুদ্ধ হবে না। এ ছাড়া এটা খুব ভালো, তাওবা করার জন্য প্রথমে সুন্দর করে অজু করে দুই রাকাত সালাত আদায় করে আল্লাহ সুবহানাহুর কাছে মাগফিরাত-ক্ষমা চাইব বিগত সব পাপ ও আদেশ অমান্য করা থেকে। তবে এই নফল সালাত তাওবার জন্য জরুরি নয়। তাওবার সময়সীমা হলো মৃত্যুর আলামত প্রকাশিত হওয়ার আগে পর্যন্ত। এ সম্পর্কে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তার বান্দার তাওবা কবুল করেন যতক্ষণ না সে (মৃত্যু যন্ত্রণায়) গরগর করে।’
(সুনানুত তিরমিযি, হাদিস-৩৫৩৭)। তবে এর মানে এ নয় যে, আমরা সেই প্রান্তিক সময়ের প্রতীক্ষা করব, আর মৃত্যুর সময় কাছাকাছি এলে তাওবা করে নেব। প্রকৃত ব্যাপার হলো আমরা কেউ জানি না ঠিক কখন আমাদের মৃত্যুলগ্ন আসবে। তাই পাপে মগ্ন থাকার সুযোগ নেই। সর্বোচ্চ এই সময়সীমা মানুষের জন্য, আল্লাহর বান্দাদের জন্য বিশেষ ইহসান। আমরা যদি হাদিসের দিকে তাকাই তাহলে দেখতে পাই রাসূল সা: বলেন, ‘হে মানব সকল! তোমরা আল্লাহর নিকট তাওবা করো; কেননা আমি প্রতিদিনে শতবার তাঁর নিকট তাওবা করি।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ৭০৩৪)। সুতরাং মুহাম্মাদ সা: এর সুন্নাত অনুযায়ী আমাদের প্রতিনিয়ত ও সার্বক্ষণিক তাওবার ওপর থাকতে হবে। তাওবা ব্যক্তি মানুষের একান্ত অনুভূতির, মনের ও অন্তরের বিষয়। আমাদের সমাজে দেখা যায় তাওবা পড়ান রীতি।
কোনো একজন মানুষ খুবই মুমূর্ষু অবস্থায় আছে, বেঁচে থাকার আশা নেই তখন মসজিদের ইমাম বা কোনো হুজুরকে ডেকে এনে তাওবা পড়ান হয়। আবার দেখা যায় কোনো পীর মসজিদে-ময়দানে বয়ান শেষে উপস্থিত মানুষদের তাওবা করায়, পড়ায়। দেখায় যায়, বয়ান শেষ হলে পীর একটি পাগড়ি ছেড়ে দেন যার একটি অংশ পীরের হাতের মুঠোর মধ্যে থাকে আর, উপস্থিত সবাই সেই পাগড়ি ধরে রাখে এবং যারা পাগড়ি ধরতে না পারে তারা পরস্পরের শরীর স্পর্শ করে অথবা পরিহিত কাপড় ধরে থাকে। তারপর উর্দু-বাংলা-আরবি মিলিয়ে বিভিন্ন বাক্য আওড়িয়ে তাওবা পড়ায়। অথচ তাওবা কাউকে ডেকে এনে করান বা পড়ানর বিষয় নয় বরং তাওবা হলো ব্যক্তি মানুষের একান্ত হৃদয়মনের ব্যাপার; ব্যক্তি স্বয়ং একাকী আল্লাহর কাছে তাওবা করবে।
আর অপ্রিয় হলেও সত্য যে, এরকম তাওবার কোনো দৃষ্টান্ত কুরআন ও হাদিসে নেই, নেই কোনো সাহাবি-তাবেয়িদের জীবনে কিংবা মুসলিম উম্মাহর প্রাথমিক যুগের কোনো সালফে সালেহিনদের কিতাবে আমলে। এইরূপ তাওবার পদ্ধতি সুস্পষ্ট সুন্নাহ পরিপন্থী গোমরাহি ও বিদয়াত। পরিশেষে আমরা উপযুক্ত তাওবার শর্তগুলো বাস্তবায়নের মাধ্যমে সুন্নাত মোতাবেক তাওবা করে আল্লাহর ভালোবাসা হাসিল করি আর সবসময় এ দোয়া মন দিয়ে অনুভব করে অর্থের দিকে খেয়াল রেখে পড়ি ‘আসতাগফিরুল্লাহ ওয়া আতুবুইলাইহি’- আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইছি ও তাঁর কাছে তাওবা করছি।
লেখক : প্রবন্ধকার
পারিভাষিক অর্থে তাওবা হলো ইসলাম নিষিদ্ধ কাজ ত্যাগ করে ইসলাম নির্দেশিত কাজ করার মাধ্যমে আল্লাহর পথে ফিরে আসা ও আল্লাহর বিধানের ওপর অটল এবং অবিচল থাকা। মুসলিম ও অমুসলিম সবাইকে ইসলাম তাওবা করার আদেশ দিয়েছেন ও আহ্বান করেছেন। আল্লাহ সুবহানাহু বলেন, ‘হে মুমিনগণ! তোমরা সকলেই আল্লাহর কাছে তাওবা করো; যাতে তোমরা সফল হতে পারো।’ (সূরা আননূর,আয়াত-৩১)। আল্লাহতায়ালা আরো বলেন, ‘হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহর নিকট তাওবা করো খাঁটি তাওবা।’ (সূরা আততাহরিম, আয়াত-০৮)। মুহাম্মাদ সা: বলেন, ‘ইয়া আইয়্যুহান নাসু তুবু ইলাল্লাহি’ অর্থাৎ হে মানব সব! তোমরা আল্লাহর নিকট তাওবা করো- আল্লাহর নিকট ফিরে আসো, প্রত্যাবর্তন করো। (সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ৭০৩৪)।
সুতরাং মুসলিম-অমুসলিম সবাইকে আল্লাহর বিধানের দিকে ফিরে আসতে হবে অর্থাৎ তাওবা করতে হবে, তাহলেই কেবল আমরা সফল হতে পারব। শরিয়াহ বিশেষজ্ঞ আলেমরা সর্বসম্মতিক্রমে বলেছেন, সর্বদা তাওবা করা প্রত্যেক মুসলিমের জন্য ওয়াজিব। ইমাম কুরতুবি র: ও ইমাম নববী র: এই ইজমার কথা তাঁদের কিতাবে উল্লেখ করেছেন। তাওবা আল্লাহর জান্নাত প্রাপ্তি, জাহান্নাম থেকে মুক্তি, ক্ষমা ও ভালোবাসা পাওয়ার একটি বিরাট সুযোগ ও উপায়। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ বেশি বেশি তাওবাকারীকে ভালোবাসেন।’ (সূরা বাকারা, আয়াত-২২২)।
আল্লাহর ভালোবাসা পেতে চায় না কে! সেই ভালোবাসার পাথেয় হলো তাওবা। আর এ তাওবা হতে হবে শুধু আল্লাহর জন্য। আমরা জানি, কর্মের ফলাফল নির্ভর করে নিয়তের ওপর। সুতরাং তাওবা আল্লাহর জন্য হলে আমরা তাওবার কাক্সিক্ষত ফজিলত লাভ করতে পারব। তাওবা কিভাবে করতে হয়? মহান আল্লাহর হক বা অধিকার সম্পর্কিত হলে তিনটি শর্ত বাস্তবায়ন করলেই তাওবা হয়ে যাবে। শর্ত তিনটি হলো- এক. পাপ পুরোপুরিভাবে ছেড়ে দিতে হবে। দুই. পাপের জন্য অনুশোচনা করতে হবে, লজ্জিত ও অনুতপ্ত হতে হবে। তিন. ওই পাপ দ্বিতীয়বার না করার সিদ্ধান্ত নিতে হবে, দৃঢ় সঙ্কল্প করতে হবে ও এরই ওপর অটল ও অবিচল থাকতে হবে। আর মানুষের হক বা অধিকারের সাথে সংশ্লিষ্ট হলে এর সাথে আরো একটি শর্ত যুক্ত হবে আর তা হলো সেই ব্যক্তি মানুষের কাছে মাফ চেয়ে নিতে হবে অথবা তার পাওনা-প্রাপ্তি, হক ফিরিয়ে দিতে হবে।
এ শর্তগুলো পূরণ করলেই তাওবা সহিহ হবে অন্যথায় তাওবা বিশুদ্ধ হবে না। এ ছাড়া এটা খুব ভালো, তাওবা করার জন্য প্রথমে সুন্দর করে অজু করে দুই রাকাত সালাত আদায় করে আল্লাহ সুবহানাহুর কাছে মাগফিরাত-ক্ষমা চাইব বিগত সব পাপ ও আদেশ অমান্য করা থেকে। তবে এই নফল সালাত তাওবার জন্য জরুরি নয়। তাওবার সময়সীমা হলো মৃত্যুর আলামত প্রকাশিত হওয়ার আগে পর্যন্ত। এ সম্পর্কে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তার বান্দার তাওবা কবুল করেন যতক্ষণ না সে (মৃত্যু যন্ত্রণায়) গরগর করে।’
(সুনানুত তিরমিযি, হাদিস-৩৫৩৭)। তবে এর মানে এ নয় যে, আমরা সেই প্রান্তিক সময়ের প্রতীক্ষা করব, আর মৃত্যুর সময় কাছাকাছি এলে তাওবা করে নেব। প্রকৃত ব্যাপার হলো আমরা কেউ জানি না ঠিক কখন আমাদের মৃত্যুলগ্ন আসবে। তাই পাপে মগ্ন থাকার সুযোগ নেই। সর্বোচ্চ এই সময়সীমা মানুষের জন্য, আল্লাহর বান্দাদের জন্য বিশেষ ইহসান। আমরা যদি হাদিসের দিকে তাকাই তাহলে দেখতে পাই রাসূল সা: বলেন, ‘হে মানব সকল! তোমরা আল্লাহর নিকট তাওবা করো; কেননা আমি প্রতিদিনে শতবার তাঁর নিকট তাওবা করি।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ৭০৩৪)। সুতরাং মুহাম্মাদ সা: এর সুন্নাত অনুযায়ী আমাদের প্রতিনিয়ত ও সার্বক্ষণিক তাওবার ওপর থাকতে হবে। তাওবা ব্যক্তি মানুষের একান্ত অনুভূতির, মনের ও অন্তরের বিষয়। আমাদের সমাজে দেখা যায় তাওবা পড়ান রীতি।
কোনো একজন মানুষ খুবই মুমূর্ষু অবস্থায় আছে, বেঁচে থাকার আশা নেই তখন মসজিদের ইমাম বা কোনো হুজুরকে ডেকে এনে তাওবা পড়ান হয়। আবার দেখা যায় কোনো পীর মসজিদে-ময়দানে বয়ান শেষে উপস্থিত মানুষদের তাওবা করায়, পড়ায়। দেখায় যায়, বয়ান শেষ হলে পীর একটি পাগড়ি ছেড়ে দেন যার একটি অংশ পীরের হাতের মুঠোর মধ্যে থাকে আর, উপস্থিত সবাই সেই পাগড়ি ধরে রাখে এবং যারা পাগড়ি ধরতে না পারে তারা পরস্পরের শরীর স্পর্শ করে অথবা পরিহিত কাপড় ধরে থাকে। তারপর উর্দু-বাংলা-আরবি মিলিয়ে বিভিন্ন বাক্য আওড়িয়ে তাওবা পড়ায়। অথচ তাওবা কাউকে ডেকে এনে করান বা পড়ানর বিষয় নয় বরং তাওবা হলো ব্যক্তি মানুষের একান্ত হৃদয়মনের ব্যাপার; ব্যক্তি স্বয়ং একাকী আল্লাহর কাছে তাওবা করবে।
আর অপ্রিয় হলেও সত্য যে, এরকম তাওবার কোনো দৃষ্টান্ত কুরআন ও হাদিসে নেই, নেই কোনো সাহাবি-তাবেয়িদের জীবনে কিংবা মুসলিম উম্মাহর প্রাথমিক যুগের কোনো সালফে সালেহিনদের কিতাবে আমলে। এইরূপ তাওবার পদ্ধতি সুস্পষ্ট সুন্নাহ পরিপন্থী গোমরাহি ও বিদয়াত। পরিশেষে আমরা উপযুক্ত তাওবার শর্তগুলো বাস্তবায়নের মাধ্যমে সুন্নাত মোতাবেক তাওবা করে আল্লাহর ভালোবাসা হাসিল করি আর সবসময় এ দোয়া মন দিয়ে অনুভব করে অর্থের দিকে খেয়াল রেখে পড়ি ‘আসতাগফিরুল্লাহ ওয়া আতুবুইলাইহি’- আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইছি ও তাঁর কাছে তাওবা করছি।
লেখক : প্রবন্ধকার
0 মন্তব্য(গুলি):
Post a Comment